মূল্যবোধ কাকে বলে ? মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। মূল্যবোধ বিকাশে বিদ্যালয়ের ভুমিকা।
মূল্যবোধের অর্থ : 'value ' শব্দটি ল্যাটেন শব্দ 'valare' থেকে এসেছে যার অর্থ to be strong 'অর্থাৎ শক্তিশালী বা যোগ্য হওয়া। ইংরেজি 'value' শব্দটি বিভিন্ন জ্ঞানের ক্ষেত্রে অর্থ বহন করে।
যেমন : অর্থনীতিতে মূল্য বলতে বোঝায় বিনিময় যোগ্যতা শিল্পের ক্ষেত্রে বোঝায় উপযোগিতা শব্দের ক্ষেত্রে বোঝায় 'Tone এর দীর্ঘতা ইত্যাদি ।
সংজ্ঞা: মূল্যবোধ কথাটি মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। কারণ মানুষ কয়েকটি ধারণার সন্নিবেশ ঘটিয়ে সে অনুযায়ী চলার পথ নির্ণয় করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পৌঁছায়। ব্যক্তিকে যোগ্য, দক্ষ, গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন এবং সামাজিক নাগরিক হিসেবে গঠন করতে সাহায্য করে, তখনই সেটা হয় মূল্যবোধ।
G WALLPORT বলেছেন- ---; মূল্যবোধ হলো জৈব মানসিক বৈশিষ্ট্যবলির এমন এক কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা যা ব্যক্তিকে সক্রিয়তার দিক থেকে পরিবেশের এক বৃহৎ অংশকে সমগুণ সম্পন্ন ভাবতে সক্ষম করে তোলে এবং তাকে সঠিক এবং উন্নত আচরণ করার প্রেরণা যোগায় ।
মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য : মূল্যবোধ ব্যাখ্যা ও উপরোক্ত সংখ্যা গুলি বিশ্লেষণ করে মূল্যবোধের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।
প্রথমত : মূল্যবোধ এক ধরনের জৈব মানসিক প্রবণতা কিন্তু এর বহিঃপ্রকাশের নির্দিষ্ট কোন বস্তুগত বা ধারণাগত মাধ্যম নেই যার জন্য একই মূল্যবোধ ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচরণ সৃষ্টি করতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ মনোবিজ্ঞানের দিক থেকে মূল্যবোধ যেমন একদিকে আচরণের উৎস অন্যদিকে বিভিন্ন উদ্দীপক বা পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ব্যক্তিকে সাধারণ ধর্মী আচরণ করতে শক্তি যোগায় ।
. তৃতীয়ত: মূল্যবোধ ব্যক্তির আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যাক্তি ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করলেও তার আচরণ বলে মধ্যে সামঞ্জস্য দেখা যায় এবং আচরণের মধ্যে বিশেষ মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে ।
. চতুর্থ : মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে, সামাজিক মানদন্ডের পরিবর্তন হয় যা মূল্যবাদের উপর প্রচলন ঘটায় ।
* শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের বিকাশের শিক্ষক এর ভূমিকা • - যেকোনো সামাজিক উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ শিক্ষককে বিশ্বাস করে শ্রদ্ধা করে এবং তার ওপর নির্ভর করে । শিক্ষক হলেন সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই শিক্ষকের একটি জাতীয় পবিএ কর্তব্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করা । কিছু দায়িত্ব নীচে আলোচনা করা হল -
1. শিক্ষকতা একটি পেশা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু বিধি আছে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই বিধি অবশ্যই মেনে চলা উচিত ।
2. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সমান চোখে দেখা উচিত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা নির্বিশেষে কারো প্রতি আচরণ বা পক্ষপাতিত্ব করা উচিত নয়।
3. শ্রম ও শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ গড়ে তোলা।
4. শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রীতি ও সৌ ভ্রাতৃত্ববোধি জাগ্রত করা
5. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভোলা প্রশংসা বোধ গড়ে তোলা।
উপসংহার- উপসংহারে বলা যায় যে, মূল্যবোধ সৃষ্টি করা একটা বড় কাজ কারণ এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের শিক্ষা পেয়ে মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে ।
* মূল্যবোধের বিকাশে বিদ্যালয়ের ভূমিকা*: কেবলমাত্র উপদেশ ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাঞ্চিত, সামাজিকতন্ত্র, আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করা সম্ভব নয়। পাঠক্রম এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।
এই কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
1.প্রার্থনা সবার আযোজন: অনেক বিদ্যালয় পঠন-পাঠন শুরু হওয়ার পূর্বে প্রার্থনা সবার আয়োজন করা হয়, প্রার্থনা শেষে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে রাজ্য ও দেশে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ গুলি পরিবেশন করবে। এই কর্মসূচি সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে সাহায্য করে।
2. স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি: প্রার্থনা সবার পর স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য বিদ্যালয়ে সাফাইয়ের কোনসি গ্রহণ করা যেতে পারে শিক্ষকের অধীনে ছাত্রছাত্রীরা স্নেকক্ষ গুলি প্রয়োজনমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন বিদ্যালয়ের চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন।
3. • নাগরিকত্ব শিক্ষা : শিক্ষার্থীদের নাগরিকত্বের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা নেতৃত্ব দেওয়া এবং অন্যান্য নাগরিকের সুলভ মূল্যবোধগুলি যাতে অনুশীলনের সুযোগ পায় ভার ব্যবস্থা করতে হবে। সুননাগরিকত্ব শিক্ষার উদ্দেশ্য বিদ্যালয়ে কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যেমন জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠান, পরিবেশ শিক্ষা, ভ্রমণ, জন্ম দিবস পালন ইত্যাদি।
4. • সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কর্মসূচি : বিদ্যালয় বিভিন্ন সংস্কৃতি ও আনন্দ অনুষ্ঠান হওয়া বাঞ্ছনীয় ।যেমন- সঙ্গীত, নৃত্য, শিল্প সাহিত্য, অভিনয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরন এবং তাদের বিকাশে সাহায্য করার লক্ষ্যে সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।
5. • সমাজসেবা মূলক কর্মসূচি : সমাজসেবা মূলক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সমাজচেতনা , সমাজ সংহতি, স্বার্থত্যাগ ইত্যাদি মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এজন্য যে কর্মসূচি গুলি গৃহীত হয় সেগুলি হল-
১. সাক্ষরতা অভিযান।
২. তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের ব্যবস্থা।
৩. সমাজ সেবামূলক কাজ করা।
৪. স্থানীয় মেলা, পূজা পার্বণে, শিক্ষার্থীরা জনতা নিয়ন্ত্রণ, জল সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদিতে স্বেচ্ছাসেবক এর কাজ করতে পারে ।
PDF download link Click here
এই রকম নতুন নতুন আপডেট পাওয়ার জন্য আমরা একটি অ্যাপ তৈরি করেছি চাইলে তোমরা সেই অ্যাপটিকে ডাউনলোড করে নিতে পারো। অ্যাপ টি ডাউনলোড করার জন্য নিচের দেওয়া icon button টিতে click করুন।



0 মন্তব্যসমূহ
Thank you