১) 👫✒
পথে প্রবাসে ' গ্রন্থের সূচনালগ্নে অন্নদাশঙ্কর রায় ' পূর্বাকথা' অংশে দক্ষিণ ভারতের চেয়ে অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন তা লেখ!
Ans:- অন্নদাশঙ্কর রায় মাত্র বারো ( ১২ ) বছর বয়সে প্রমথ চৌধুরীর ' চার ইয়ারী কথা ' বইখানি পড়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দর্শনের কৌতূহল জাগে তাঁর মনের মধ্যে । এরপরে কলেজে পড়াকালীন ছয় বছর ইউরোপের ইতিহাস এবং ইউরোপীয়ান লেখকদের নানা উপন্যাস - গল্প পড়ে ইউরোপ সম্পর্কে তাঁর আকর্ষণ বেড়ে যায় । ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করার পর তাঁর ইউরোপ যাওয়ার পথ পরিষ্কার হল।দুই বছরের শিক্ষানবীশের জন্য তাঁকে পাড়ি দিতে হল লণ্ডনে । তখন অন্নদাশঙ্করের বয়স তেইশ - চব্বিশ বছর সময় ১৯২৭-২৯ । তখন সমুদ্রপথে জাহাজে করে ইংল্যান্ড বা ইউরোপের দেশে যেতে হত । অন্নদাশঙ্কর শ্রাবণ মাসের এক মধ্যরাতে মধ্যরাতে জাহাজে উঠেছেন উড়িষ্যার কটক থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে । কটক থেকে বঙ্গে , বঙ্গে থেকে লক্ষন— এই হল তাঁর যাত্রা । মাঝখানে বঙ্গোপসাগর , আরব সাগর , লোহিত সাগর , ভূমধ্যসাগর , সুয়েজ খাল , পোর্ট স্যৈান । তখন শুক্লপক্ষ । কিন্তু শ্রাবণ মাসের আকাশ । তাই চাঁদ দেখা যাচ্ছিল না ।
অন্নদাশঙ্কর যে জাহাজে চড়েছেন সেটি বঙ্গোপসাগরের কূল ধরে পূর্বঘাট পর্বতমালার ধার দিয়ে চিন্তাহ্রদের কোল ঘেঁষে গোদাবরী নদী , হায়দরাবান , পশ্চিমঘাট পর্বতমালা পার হয়ে বম্বে । অর্থাৎ কটক , ওয়ালটেয়ার , বেলওয়াড়া , সেকেন্দ্রাবাদ , পুনা , বন্ধে এই হল পথ । দক্ষিণ ভারতের এই যাত্রাপথে তিনি যা যা দেখেছেন তা সকলের সামনে তুলে ধরেছেন । এতে তিনি যেমন প্রকৃতির বর্ণনা করেছেন তেমনি নর - নারীর বিচিত্র বেশ - ভূষা , চলমান জীবনের নানা কথা ব্যক্ত করেছেন । শেষ রাতের দিকে জাহাজ এলো চিন্তা হ্রদের কাছে । চিহ্নাকে তিনি সুন্দরী বলে সম্বোধন করেছেন তার শোভা দেখে । চিন্তা থেকে গোদাবরী পর্যন্ত তালীবন , পাহাড়ের পর পাহাড় । কিন্তূ রুক্ষ।
তিনি দেখছেন এখানের মেয়েরা রঙিন কাপড় ছাড়া পরেই না । এমনকি পুরুষরাও । মেয়েরা মাথায় কাপড় দেয় না , বিধবারা দেয় । মেয়েদের অবরোধ প্রথা বাঙালি মেয়েদের থেকে শুজরাটি মেয়েদের গঠন সুসামঞ্জস্য । বাঙালি মেয়েদের মুখে একটা স্নিগ্ধভাব ফুটে ওঠে , গুজরাটী মেয়েদের সেরকম নয় । পারসীরা এ অঞ্চলে নয় । কেবলই মাঠ আর পাহাড় । পাহাড়ের গায়ে গায়ে দুর্গ হায়দরাবাদের লোকসংখ্যাপ্রায় দেড় কোটি । এর পূর্বভাগে তেলেগুনের বাস , পশ্চিম দিকে মারাঠা ও কানাড়ীদের বাস । রাজারা হল মুসলমান । মুসলমান বলেই এদের ভাষা উর্দু । কানাড়ী মেয়েরা , পুরুষের সঙ্গেই কাজ করে । লজ্জাশরম এদের নেই । কানাড়ী নারীরা পুরুষের কর্মসূহচরী । মাঠে - ঘাটে পুরুষের সঙ্গে ঘটিছে । মহারাষ্ট্র পাহাড় পর্বতের দেশ । বহিঃ প্রকৃতি সুন্দর । নানারীদের চোখে মুখে কমনীয়তা ভাব লক্ষ করা যায় না । বেশ - ভূষায় নারী - পুরুষ প্রায় সমান । মালাবারে মেয়েরা , পুরুষেরা কাছা দেয় না , কিন্তু মহারাষ্ট্রে মেরোরা , পুরুষেরা কাছা দেয় “ মারাঠী মেয়েরা কর্মঠ । অবরোধ প্রথা নেই । তরুণীরা পায়ে হেঁটে স্কুল - কলেজ যাচ্ছে । কত মেয়ে একাকী ট্রেনে , বাসে , ট্রামে যাচ্ছে । ওয় লজ্জা - সংকোচ নেই । শ্রমিক শ্রেণির মেয়েদের ভারবহন ক্ষমতা বেশ , ছুটে চলার গতি তীব্র । এদের কাছে বাঙালি পুরুষরা মনে হবে কুঁড়ে । অর্থনৈতিক জীবনযুদ্ধে গুজরাটীরা মারাঠীদের থেকে এগিয়ে । গুজরাটীদের মধ্যে পারসীরাও পড়ে । পারসীদেরও মাতৃভাষা গুজরাটী । গুজরাটী সাহিত্য রবীন্দ্রপূর্ব বাংলা সাহিত্যের সমকক্ষ । গুজরাটীরা পৃথিবীর নানা দেশে ধনের আশে ছড়িয়ে পড়েছে । গুজরাটী পুরুষরা কষ্টসহিষ্ণু এবং কর্মঠ । তাঁদের ব্যবসায়িক বুদ্ধিও প্রথৱ । উত্তর ভারতের সঙ্গে সান্নিধ্য থাকায় গুজরাটী মেয়েদের গতিবিধির স্বাধীনতা মারাঠীদের থেকে মেয়েদের পোশাক - পরিচ্ছদের পারিপাট্য অনেকটা বাঙালি মেয়েদের মতই । মারাঠা মেঘেরা যে অন্তর্বাস পরে তা বুকের নিচ পর্যন্ত । কোমরের কাছে অনাবৃত , তা তা শাড়ি । তার উপরেই দিয়ে ঢাকতে হয় । গুজরাটী মেয়েরা যে অন্তর্বাস পরে তা আপাদচুম্বী । তার উপরেই শাড়ি পরে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেত থেকে গুজরাটী আই.সি.এস. পাশ করে এসে গুজরাটের আমেদাবাদে চাকরিতে যোগদান করেন । সঞ্জীক এখানে থাকতেন । শোনা যায় সত্যেন্দ্রনাথের পত্নী আনদা দেবী গুজরাটী মেয়েদের মত অন্তর্বাস পরতেন । আর জ্ঞানদাদেবী থেকেই বাংলার বাঙালি মেয়েরা অন্তর্বাস পরতে শুরু করে গুজরাটীদের মতই । গুজরাটী মেয়েদের দেহের ও মুখের গাবণ্যে মারাঠা মেয়েদের সঙ্গে অমিল থাকলেও বাঙালি মেয়েদের মিল আছে । তবে । হায়দরাবাদের লোকসংখ্যা নেই । হায়দরাবাদের নিজামরাজ্য যার পূর্ব নাম ছিল গোলকোণ্ডা । এ দেশ সুজলা - সুফলা ফ্যাশনে অগ্রগণ্য । রীতিরুচিতেও অভিজাত । পারসী মেয়েদের বেশভূষা জাঁকালো । মেয়েদের অন্তর্বাস এমন যা ত্রিস্তর পর্যন্ত বাইরে থেকে লক্ষ করা যায় । বৃদ্ধা নারীদের শাড়িতেও বাহার আছে । মারাঠা রমণীদের শাড়ির বাহার আঁচলে , আর গুজরাটীদের পাড়ে । হালকা রঙের শাড়ির প্রচলন কম । সাদা রঙের প্রচলন গুজরাটীদের মধ্যে দেখা যায় । গুজরাটী ও পারসী মেয়েরা খোঁপার সঙ্গে এঁটে মাথায় কাপড়ও দেয় , ঘোমটার মত করে নেয় । গহনার বাহুল্য এঁদের নেই । গুজরাটী মেয়েরা কোনো জুতোই পরে না , পারসী মেয়েরা ইংরেজী জুতো পরে । মারাঠা মেয়েরা পরে চটি । এরপরে বম্বে শহরের কথা বলেছেন অন্নদাশঙ্কর । বম্বে কলকাতা থেকে ছোটো কিন্তু প্রকারে সুন্দর । এর প্রায় চারিদিকে সমুদ্র , দূরে দূরে পাহাড় । ভিতরে রয়েছে মালাবার হিল । শহরের রাস্তাগুলি যেন প্লান করে তৈরি । বম্বেবাসীদের রুচিও আছে । প্রশংসা করতে হয় তাদের রুচির । প্রত্যেক বাড়ির একটা স্বতন্ত্র ডিজাইন আছে । নগর স্থাপত্যের ভালো নিদর্শন এখানে । বম্বে বাস্তশিল্পের মধ্যে রয়েছে ইংরেজীয়ানা । তবে খাঁটি ইংরেজীয়ানা নয় । এইভাবে অন্নদাশঙ্কর ‘ পথে প্রবাসে ’ ভ্রমণ কাহিনিমূলক গ্রন্থের সূচনালগ্নে ' পূর্বকথা ' অংশে দক্ষিণ ভারতের নদী , সমুদ্র , পাহাড় - পর্বত , প্রকৃতি এবং নর - নারীর গতি , রুচি , বেশভূষার পরিচয় সুসামঞ্জস্য ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন । সেই সঙ্গে বাঙালি মেয়েদের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতীয় বিশেষ করে মারাঠা ও গুজরাটী মেয়েদের তুলনা করেছেন । ফলে গুজরাট , মহারাষ্ট্রে না গেলেও ‘ পথে প্রবাসে’র ‘ পূর্বকথা ’ অংশ পড়ে আমরা দক্ষিণ ভারত সম্পর্কে জানতে পারি । অন্নদাশঙ্কর বিলেত যাত্রাকালে যা যা চোখে দেখেছেন তা এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন তা সাহিত্য পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে কেমলমাত্র তাঁর সাহিত্য প্রতিভার ছোঁয়ায় । কত নিখুঁতভাবে অন্নদাশঙ্কর রায় বিলেত যাত্রাপথের চারপাশ দেখেছিলেন তা তাঁর ‘ পথে প্রবাসে ’ পড়লেই অনুধাবন করা যায় ।
এই নোটটি ডাউনলোড করার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন 👇👇
📩Pdf download link Click here

2 মন্তব্যসমূহ
Vcc
উত্তরমুছুনSuperb
উত্তরমুছুনThank you