১) পথে প্রবাসে গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
>বিচিত্রা পত্রিকা
২) পথে প্রবাসে গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
>১৯৩১খ্রিস্টাব্দে।
৩) বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
>উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
৪) 'পথে প্রবাসে' গ্রন্থকারের কে প্রকাশ করেন ?
>সুধীর চন্দ্র সরকার।
৫) অন্নদাশঙ্কর রায় ইংল্যান্ডে গিয়ে সঙ্গী হিসেবে কাকে পেয়েছিলেন ?
> মহেন্দ্রলাল বসুকে।
৬) 1931 সালে পথে প্রবাসে গ্রন্থের ভূমিকা কে লিখেছিলেন ?
>প্রমথ চৌধুরী।
✒ * ‘ পথে প্রবাসে ’ গ্রন্থে অন্নদাশঙ্কর সমুদ্র এবং সমুদ্রপীড়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা লিখ ।
অথবা ,
* সমুদ্রপথে জাহাজে করে লণ্ডন যাওয়ার সময় অন্নদাশঙ্কর সমুদ্র ও সমুদ্রপীড়ার এবং সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলের যে অভিজ্ঞতার কথা ‘ পথে প্রবাসে ' গ্রন্থে লিখেছেন তা নিজের ভাষায় লিখ । অথবা ,
* সমুদ্রপথে জাহাজে করে বম্বে থেকে লণ্ডন যেতে যেতে অন্নদাশঙ্কর যা যা দেখেছিলেন এবং জাহাজে সমুদ্রপীড়ায় ভুগেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায় ‘ পথে প্রবাসে ’ গ্রন্থে তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন সকলের সামনে । বক্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো ।
Ans:-
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছোটোবেলায় প্রমথ চৌধুরীর ‘ চার ইয়ারী কথা ’ উপন্যাস পড়ে ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্স যাওয়ার স্পৃহা জাগে । তারপর কলেজ জীবনে ইউরোপের ইতিহাস এবং গল্প - উপন্যাস পড়ে বাসনা আরও তীব্র হয় । সে বাসনার দ্বার খুলে গেল যখন আই.সি.এস. পরীক্ষায় পাশ করলেন । তেইশ - চব্বিশ বছর বয়সে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে অন্নদাশঙ্কর লণ্ডন যাত্রা করেন আই.সি.এস. পড়তে । সেখানে দুই বছর ১৯২৭-১৯২৯ খ্রি . পর্যন্ত ছিলেন আই.সি.এস. এর শিক্ষানবীশ হিসেবে । তিনি ভ্রমণ পিপাসু ছিলেন । তিনি শুধু পড়তে যান নি । গোটা ইউরোপ তাঁর ঘুরে দেখার ইচ্ছে । পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে অন্নদাশঙ্কর ইউরোপের নানা দেশে গিয়ে সেখানকার নর - নারীর বেশ - ভূষা , কর্ম , জনজীবন , প্রাচীন স্থাপত্য ইত্যাদি যেমন দেখেছেন তেমনই লিখেছেন । ‘ বিচিত্রা ’ পত্রিকায় তা ধারাবাহিক ছাপা হয়ে বেরিয়েছিল । ১৯৩১ সালে ‘ পথে - প্রবাসে ’ গ্রন্থবদ্ধ হয়ে প্রকাশ হয় । পথে প্রবাসে ’ শুধু ভ্রমণ বৃত্তান্ত হয়ে থাকে নি , অন্নদাশঙ্করের সমুদ্রে জাহাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ইউরোপের নানান দেশের বাস্তব চোখে দেখা অভিজ্ঞতার সঙ্গে মননের মিলনে তা সাহিত্য পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে । ‘ পথে প্রবাসে’র প্রথম পরিচ্ছেদে রয়েছে জাহাজে সমুদ্রপথের বর্ণনা । জাহাজ এসেছে বম্বে । অন্নদাশঙ্কর বম্বে শহরের বর্ণনা দিয়েছেন । জাহাজ এগিয়ে চলেছে । ভারত ও আফ্রিকার মাঝখানে আরব সাগরে এখন জাহাজ । ঢেউ এসে এমন ভাবে জাহাজে লাগছে মনে হচ্ছে জাহাজকে গলা ধাক্কা দিচ্ছে ঢেউগুলো । তখন বর্ষাকাল । ফলে জলে পরিপূর্ণ সমুদ্রে জাহাজ একবার এদিক একবার ওদিক কাৎ হচ্ছে । মনে হচ্ছে ফুটন্ত তেলে পাঁপড়ের মতো ভাজছে । টলতে টলতে চলছে আহাঃ । যাত্রীরা । ডেক ছেড়ে শয্যায় আশ্রয় নিয়েছে । অসহ্য সমুদ্র পাড়া । কারুর সঙ্গে দেখা নেই । ক্ল সকলেই নিজ নিজ ক্যাবিনে শয্যাশায়ী । অনেকেরই কান শুরু হয়েছে । ক্যাবিন স্টুয়ার্ড খাবার দিয়ে যায় । খেতে ইচ্ছে না করলেও ক্ষুধার তাড়নায় যেতে হয় । বমনে অতীষ্ট হয়ে উঠেছে অনেকেই । সমুদ্রপীড়ায় মাথায় যন্ত্রণা ধরেছে । এমন অস্বস্তি যে রবীন্দ্রনাথের ' চয়নিকা ' বইও পড়তে ইচ্ছে হয় না । অনেকে বলতে লাগলেন এজেনে নেমেই আবার স্বদেশে ফিরে আসবেন । সমুদ্রযাত্রার এই দুর্ভোগ আর সইতে পারছেন না । কিন্তু এডেনে নামলেও সেই সমুদ্র পথেই আবার কিরতে হবে । ফলে ব্যাপারটা একই । লেখক সহ অনেকেই ভাবলেন মার্সেলসে নেমে প্যারিস হলেণ্ডন যাবেন । আরব সাগরের পর লোহিত সাগর । ততদিনে সনুদ্রপীড়া চলে গেছে । আফ্রিকা ও আরবের মাঝখানে হ্রদতুল্য সমুদ্র দুর্দান্ত নয় । এবার সকলে ক্যান্টিন ছেড়ে জেকে চেয়ারে গিয়ে বসছেন । ডেক থেকে লেখক অন্নদাশঙ্কর সমুদ্র মনপুরে দেখছেন । চারিদিকে জল আর জল । লোহিত সাগরের পরে ভূমধ্যসাগরে এলো জাহাজ । এ দুরের মাঝখানে সুয়েজ খাল । ভারত আর ইউরোপের মিলন ঘটালো এই সুয়েজ খালের মাধ্যমে । আগে কয়েক হাজার মাইল ঘুরে আসতে হতো ইউরোপে । ফ্রান্সের লেসেপ্স্ তা সহজ করে দিলেন সুয়েজ খাল কেটে জাহাজ চলাচলের উপযোগী করে দিয়ে । এখন তা মাত্র কয়েক শত মাইল ব্যবধান । এ অংশটি মিশরের মধ্যে পড়ে । এখানে ছোট্টো কিন্তু মনোরম একটি শহর পোর্ট সৈয়দ । ফ্রান্সের প্রভাব রয়েছে । এখানে । পোর্ট সৈয়দে জাহাজ ভিড়লে লেখক সেখানে নেমে ঘুরে দেখলেন খানিকটা । এখানে নানা দেশের নানা জাতির লোকের আনাগোনা । ইউরোপীয়দের স্বাধীন মনোবৃত্তি পোর্ট সৈয়দে লক্ষ করা যায় । পোর্ট সৈয়দ ছেড়ে জাহাজ পড়ল ভূমধ্যসাগরে । শান্তশিষ্ট ভূমধ্যসাগর । কিন্তু শেষে দেখা গেল জাহাজ আবার দোল খেতে লাগল এবং সমুদ্রগীড়ায় অনেকেই শয্যাশায়ী হলেন । পোর্ট সৈয়দ থেকে মার্সেল্স্ যাওয়ার সময় দেখছেন ইটালি ও সিসিলি । এদের মাঝখানে রয়েছে মেসিনা প্রণালী । প্রণালীর দুই ধারে পাহাড়েরসারি । পাহাড়ের বুকে দেখলেন জ্বলন্ত ট্রাম্বোলী আগ্নেয়গিরি । এই ট্রম্বোলী আগ্নেয়গিরিকে লেখক রাবণের চিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন । এবার জাহাজ এসে ভিড়ল ফ্রান্সের সেরা বন্দর এবং ফরাসীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেলসে । ইতিহাসে এ শহরের নাম আছে । কাব্যে এ অঞ্চলের নাম আছে । La Marseileaise- এর এ নগরেই জন্ম । ফরাসী সহজিয়া কবি troubadour- দের প্রিয়ভূমি মার্সেলস্ । এখানে বসন্ত দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বচ্ছ জ্যোৎস্না দেখা যায় । এখানকার ছোটো ছোটো গ্রামে গ্রীষ্মযাপন করতে পৃথিবীর সব দেশের লোক আসে । লেখকসহ আরো কয়েকজন Bandol নামক একটা গ্রামে একটা দুপুর কাটিয়েছিলেন । মার্সেল্স্ শহরটা পাহাড় কেটে তৈরি । এখানকার অনেক রাস্তার দু'ধারে গাছের সারি তারপরে ফুটপাত । মার্সেল্স্ থেকে রেলপথে গেলেন প্যারিস । এক রাত কাটল রেলে । প্যারিস থেকে রেলপথে ক্যালে । ক্যালে থেকে জলপথে ডোভার । ডোভার থেকে রেলপথে লণ্ডন পৌঁছলেন লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় । এইভাবে অন্নদাশঙ্কর বম্বে থেকে লণ্ডন পৌঁছতে মাঝখানে যে আরব সাগর , লোহিত সাগর , সুয়েজ খাল , ভূমধ্যসাগর , ফ্রান্সের মার্সেস্ , মিশরের পোর্ট সৈয়দ প্রভৃতির বর্ণনা দিয়েছেন তা অতুলনীয় । জাহাজে যে সমুদ্রপীড়া হয় তাও নিখুঁতভাবে ব্যক্ত করেছেন । সমুদ্রের সৌন্দর্যও ফুটে উঠেছে ‘ পথে প্রবাসে ' গ্রন্থে । বম্বে থেকে লণ্ডন এই সামুদ্রিক পথের বর্ণনা অন্নদাশঙ্করের লেখনী নৈপুণ্যে অনবদ্য হয়ে সাহিত্যে স্থান লাভ করেছে । ‘ পথে প্রবাসে ’ সে কারণে শুধু ভ্রমণ কাহিনি নয় , ভ্রমণ সাহিত্যও বটে ।
এই নোট টি ডাউনোড করতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন 👇👇👇
PDF DOWNLOAD LINK- Click here


0 মন্তব্যসমূহ
Thank you