রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো! ১×৮= ৮
ভূমিকা:- ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী হলেন রাষ্ট্রপতি। শাসন বিভাগের শীর্ষে রাষ্ট্রপতির অবস্থান। সংবিধানের ৫৩ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই অর্পণ থাকবে। তিনি নিজে কিংবা তার নিযুক্ত কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি একাধারে শাসন বিভাগের কর্তা, অন্যদিকে আইন বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক। আজ আমরা আলোচনা করবো ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পর্কে।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যোগ্যতাবলী :-
(ক) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁর বয়স অন্তত ৩৫ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
(গ) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় তিনি সংসদ বা রাজ্যবিধান সভার সদস্য অথবা কোনও সরকারি বা বেসরকারি পদে অথবা অর্থ প্রাপ্তি হয় এমন কোনোও পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।
(ঘ) তাঁকে লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী:- রাষ্ট্রপতি ভারতের সাংবিধানিক প্রধান এবং সেই সূত্রে তিনি সর্বময় প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর মত তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। আসল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের হাতে ন্যস্ত। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীমন্ডলী এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে সকল নির্দেশিকা জারি হয় রাষ্ট্রপতির নামে। ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ছয় ধরনের ক্ষমতার অধিকার প্রদান করেছে। ৫৩(১) নং ধারানুযায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে যে ক্ষমতাগুলি অর্পণ করা হয়েছে সেগুলি হল--
১. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা:- রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপালদের, ভারতের একাউন্ট জেনারেল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন ও তাঁদের পদচ্যুত করার অধিকার রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এছাড়া তিনি সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, অডিটর জেনারেল, নির্বাচন কমিশনার, সশস্ত্র তিন বাহিনীর প্রধান এবং ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর পদাধিকার বলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীত্রয়ের সর্বাধিনায়ক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ রাষ্ট্রশাসন ও পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বাধ্য থাকেন।
২. আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা:- রাষ্ট্রপতি লোকসভা গঠন, লোকসভার অধিবেশন আহ্বান প্রয়োজনে মুলতুবি ইত্যাদি করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি দুজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্যকে লোকসভায় মনোনীত করেন। এ ছাড়া রাজ্যসভার ১২ জন সদস্যও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। তাঁর সম্মতি ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। অর্থবিল (money bill) ছাড়া অন্য যে-কোনো বিলকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদের উভয় পরিষদে ফেরত পাঠাতে পারেন।
৩. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা:- ভারতীয় অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির হয়ে সংসদে বাজেট পেশ করেন। বাজেট অধিবেশনের আগে রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতির হাতে রাষ্ট্রের আকস্মিক ব্যয় সংকুলানের জন্য একটি বিশেষ তহবিল থাকে।
৪. বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিরাও রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন। সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির প্রাণরক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি মকুব করতে পারেন বা নাও পারেন।
৫. জরুরী অবস্থা বিষয়ক ক্ষমতা:- ভারতের সংবিধান অনুসারে তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন, একে রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতা বলে, যেমন—
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা— যুদ্ধ, বৈদেশিক আক্রমণ ও নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ।
(খ) রাজ্যগুলিতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা দেশে অরাজক অবস্থা উপস্থিত হলে রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরি অবস্থা (রাষ্ট্রপতি শাসন) ঘোষণা করতে পারেন।
(গ) সমগ্র দেশ বা দেশের কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব ও সুনাম এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাষ্ট্রপতি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
৬. রাজ্য সংক্রান্ত ক্ষমতা বা সামরিক ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালদের নিয়োগ করে থাকেন। এছাড়া রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় বিধানসভায় পেশ করার আগে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়।
৭. ভিটো ক্ষমতা:-


0 মন্তব্যসমূহ
Thank you