Ticker

100/recent/ticker-posts

Translate

Curriculum framework at different levels of education. শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যক্রম ও কাঠামো আলোচনা কর।

 Curriculum framework at different levels of education. শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যক্রম ও কাঠামো আলোচনা কর।

ভূমিকা:- প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা রয়েছে, সেইসব শিক্ষা স্তরের কাঠামো ও পাঠ্যক্রম গুলি  হলো:- 

১. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো ও পাঠ্যক্রম :-

শিক্ষার স্তর :-  প্রাক- প্রাথমিক।

শিক্ষার সময়কাল:- তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত।

পাঠ্যক্রম :- 

১. দৈহিক বিকাশমূলক কার্যাবলী:- শৈশবকালে শিশুর দৈহিক বিকাশের গুরুত্ব খুবই। তাই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যক্রমে শিশুর শরীর চর্চা মূলক কার্যাবলীর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এই স্তরের পাঠ্যক্রমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, ব্যায়াম, ছড়া, গান ও নাচ প্রভৃতি। এই সমস্ত কার্যাবলির মাধ্যমে শিশুর দৈহিক সামর্থ্যের বিকাশ ঘটে।

(২) স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কার্যাবলি : - শিশুকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কাজ এই স্তরের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন- শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জ্ঞান দান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা প্রভৃতি পাঠ্যক্রমে স্থান দেওয়া হয়।

(৩) ইন্দ্রিয় পরিমার্জনামূলক কাজ :- এই স্তরে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয় পরিমার্জনা। তাই বিভিন্ন ইন্দ্রিয়। পরিমার্জনামূলক কাজ, যেমন- মাটি দিয়ে কোনো জিনিস তৈরি, ছবি আঁকা, কাগজ কাটা, ছবি সংগ্রহ ইত্যাদি এই স্তরের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এই কার্যাবলি শিশুর সক্রিয়তা ও সৃজনাত্মক প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করে।

৪. ভাষাবোধের বিকাশ : -শিশুর ভাষা বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন ভাষাকে স্থান দেওয়া হয়। ভাষা শিশুর ভাব-প্রকাশের মাধ্যম। তাই প্রাথমিকভাবে অক্ষর পরিচিতি, পড়া, লেখা, ছড়া পাঠ, গল্পবলা প্রভৃতি কার্যাবলিকে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৫. প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ :- এই বয়সের শিশুদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত করার জন্য পশু, পাখি,নদী, পাহাড়, পর্বত, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা, গাছপালা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়।

৬.সাধারণ গণিত : - সাধারণ গাণিতিক ধারণা বিকাশের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে বিভিন্ন জিনিস প্রাণনা করা, সংখ্যা পরিচিতি, সাধারণ যোগ-বিয়োগ প্রভৃতি গণিতের প্রাথমিক বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 ৭. সামাজিক বোধের বিকাশ ঃ - এই বয়ঃস্তরে শিশুর সামাজিক বোধের বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে বিভিন্ন সামাজিক অভিজ্ঞতামূলক কার্যাবলি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন দলবদ্ধভাবে গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়, বিভিন্ন শিশুদের জন্মদিন পালন করা ইত্যাদি বিষয়কেই পাঠ্যক্রমে স্থান দেওয়া হয়।

৮. সৌন্দর্যবোধের বিকাশ :-  প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশের জন্য চারুকলা, কাগজের ফুল তৈরি, ছবি আঁকা, গান প্রভৃতি বিষয়কে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

        ***কোঠারি কমিশনের সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পাঠক্রম রচিত হয়েছে। এই পাঠ্যক্রমের মধ্যে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সুনাগরিক করে গড়ে তুলবে।***

প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের কাঠামো পাঠ্যক্রম:- 

শিক্ষার স্তর:- প্রাথমিক।

শিক্ষার প্রকৃতি:- নিম্ন প্রাথমিক স্তর ও উচ্চ প্রাথমিক স্তর।

শিক্ষার সময় কাল:- নিম্ন প্রাথমিক স্তরের সময়কাল চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত।

এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরের সময়কাল চার থেকে তিন বছর পর্যন্ত।

শ্রেণী:- নিম্ন প্রাথমিক স্তরের শ্রেণী প্রথম থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত।

এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শ্রেণী পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।

বয়স:- নিম্ন - প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বয়স ৬ বা ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত।


পাঠ্যক্রম :- 

(a) একটি ভাষা:-  ও মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক একটি ভাষা।

(b) গণিত:-  শিশুদের মধ্যে গণিতের প্রাথমিক ধারণা বিকাশসাধন করে।

(c) পরিবেশ বিজ্ঞান ও সমাজবিদ্যা :-  পরিবেশ সম্বন্ধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান পাঠ করবে। তবে এই বিষয়গুলিতে প্রাথমিক ধারণা থাকবে। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের Roman Alphabet শেখানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া চাট, ম্যাপ, ছবি প্রভৃতির মাধ্যমে শেখানোর  ব্যবস্থা রাখা দরকার।

(d) সৃজনশীল কাজ : সংগীত, নাটক এবং বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবে হবে। যাতে শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে। (e) কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা:-  কাগজ কাটা, মাটি বা প্লাসটিসিন দিয়ে মডেল তৈরি, সুতো কাটার কাজ, সুচের কাজ, বাগান তৈরি ইত্যাদি। এ ছাড়া এই শিক্ষান্তরে সমাজসেবামূলক কাজের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার, বিদ্যালয় সাজানো ইত্যাদি কাজগুলি থাকে।

(f) স্বাস্থ্য শিক্ষাঃ শিশুদের মধ্যে ভালো স্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সেই উপযোগী শিক্ষা দেওয়া দরকার।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার কাঠামো ও পাঠ্যক্রম:-

শিক্ষার স্তর:- নিম্ন মাধ্যমিক।

সময়কাল:- তিন বা ৩/২ দুই বছর পর্যন্ত।

শ্রেণী:- অষ্টম, নবম ,দশম।

বয়স :- মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পাঠ্যক্রম:- 

(১) ভাষা (Language) : এই স্তরে শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ মানসিক বিকাশ ঘটে তার সঙ্গে সামওয়্য রেখেই ভাষা বিভাগে তিনটি ভাষা শেখানোর কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ, ত্রিভাষা সূত্র প্রযোজ্য হবে। (a) মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা, (b) দ্বিতীয় ভাষা হল হিন্দি বা ইংরেজি (c) তৃতীয় ভাষা হল অতিরিক্ত যে-কোনো প্রাচীন ভারতীয় ভাষা।

(2) বিজ্ঞান (Science) : বিজ্ঞান বিভাগটি গঠিত তিনটি বিষয়কে নিয়ে 

(a) ভৌতবিজ্ঞান: এর মধ্যে থাকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা।

(b) জীববিজ্ঞান ঃ জীববিজ্ঞানের মধ্যে রয়েছে – (i) জীববিদ্যা, (ii) উদ্ভিদবিদ্যা, (iii) শারীরবিদ্যা।

(c) গণিত :-  গণিতের মধ্যে ছয়টি বিষয় রয়েছে, যথা – (i) – পাটিগণিত, (ii) বীজগণিত, (iii) জ্যামিতি, (iv) ত্রিকোণমিতি, (v) পরিমিতি, (vi) রাশিবিজ্ঞান।

(৩) সমাজবিজ্ঞান (Social science) : এই বিভাগে রয়েছে ইতিহাস ও ভূগোল। এই দুটি বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক জ্ঞানলাভ করতে পারবে। 

(৪) কর্ম অভিজ্ঞতা : এই বিভাগের মধ্যে তিনটি বিষয় রয়েছে, যেমন - (i) কর্মশিক্ষা, (ii) শারীরশিক্ষা, (iii) সমাজসেবা কর্ম-অভিজ্ঞতামূলক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাস্তবভিত্তিক শিক্ষালাভ করে। শারীর শিক্ষার

মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করানো হয়। আর সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।


(৫) অতিরিক্ত বিষয় (Additional subject) : এই বিভাগে একাধিক বিষয় আছে। এখান থেকে শিক্ষার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী যে-কোনো একটি বিষয় বেছে নিতে পারে।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে কাঠামো পাঠ্যক্রম:- 

শিক্ষার স্তর:- উচ্চ মাধ্যমিক।

শ্রেণী:- একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত।

সময় ও বয়স:- এই শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স কাল 16 থেকে 18 বছর বয়স পর্যন্ত।


পাঠ্যক্রম:- 

(i) সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রম:: - সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয় – (a) ভাষা, (b) আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়সমূহ, (c) অতিরিক্ত বিষয়সমূহ, (d) ক্রমভিত্তিক বিষয়।

(a) ভাষা :-  এই স্তরে দুটি ভাষা বাধ্যতামূলক। তবে মাধ্যমিক স্তরে যে ভাষাটি প্রথম ভাষা হিসাবে শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছিল সেটি এখানে অগ্রাধিকার পাবে। (a) আধুনিক ভারতীয় ভাষা, (b) আধুনিক বিদেশি ভাষা, (c) প্রাচীন ভারতীয় ভাষা- এই তিনটির মধ্যে যে-কোনো দুটি ভাষা। (b) আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয় :- এখানে দু'ধরনের বিষয় রয়েছে- (a) পরীক্ষাভিত্তিক বিষয় এবং (b) পরীক্ষাভিত্তিক নয়। এরকম একুশটি বিষয় রয়েছে। এই বিষয়গুলি থেকে তিনটি বিষয় শিক্ষার্থী তার রুচি, সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন করে নিতে পারবে।

(c) অতিরিক্ত বিষয়সমূহ : এই বিভাগে আবশ্যিক ঐচ্ছিক তিনটি বিষয় ছাড়া শিক্ষার্থীরা আরও একটি অতিরিক্ত বিষয় নির্বাচন করতে পারে। এর দ্বারা শিক্ষার্থীর পাঠ্যসূচির বাইরে জ্ঞান অর্জন করানো হয়।

(d) কর্মভিত্তিক বিষয় :- এখানে শিক্ষার্থীকে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা ও সমাজসেবা ইত্যাদি শেখানো হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ