Ticker

100/recent/ticker-posts

Translate

পাঠক্রম কাকে বলে? পাঠ্যক্রমের প্রকারভেদ সহ তাদের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো ?

 পাঠক্রম কাকে বলে? পাঠ্যক্রমের প্রকারভেদ সহ তাদের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো ?

ভূমিকা:- আধুনিক শিক্ষা কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার যে সমস্ত খন্ড খন্ড উপাদান নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান হলো পাঠ্যক্রম। সমাজের চাহিদা ও শিক্ষায়দের কথা মাথায় রেখে পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত ধারণার পরিবর্তন ঘটে গেছে তাই তো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্লিপেট্রিক বলেছেন যে- " Curriculum Menifests Live In Reality".

  * পাঠ্যক্রম সাধারণত দুই প্রকার একটি হলে Hidden curriculum বা লুকায়িত পাঠক্রম এবং  আরেকটি হলেWritten Curriculum লিখিত বা অব্যক্ত পাঠক্রম।

Hidden curriculum:-  প্রতিটি শিক্ষক প্রতস্যা করেন যে, এই সব কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান বৃদ্ধি হবে, দক্ষতা বিকশিত হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু এই সব প্রত্যাশা গুলী ব্যক্ত হয় না বা পাঠ্যক্রম পরিকল্পনায় উল্লেখ করা থাকে না, তাকেই লুক্কায়িত পাঠ্যক্রম বলে। যেমন:- শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করলে উঠে দাড়ানো, শিক্ষক মহাশয় class থেকে চলে উঠে দাঁড়িয়ে ধন্যবাদ জানানো।

Written Curriculum:- ব্যক্ত বা লিখিত পাঠক্রম:- যে পাঠ্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের প্রতি অনুরোধ সৃষ্টি হয় এবং বিষয়কেন্দ্রিক ও সমাজ কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের সমন্বয়ে ঘটানো যায়, তাকে লিখিত পাঠ্যক্রম বলে।

    *আবার এই লিখিত পাঠ্যক্রম কে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়:- যথা

১. গতানুগতিক বা বিষয়ক ভিত্তিক পাঠ্যক্রম (Traditional/Classical/Subject Centriced curriculum)

২ . কর্মভিত্তিক বা কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম (work activities/work based curriculum)

৩. অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম ( Experience Curriculum)

৪. অবিচ্ছিন্ন পাঠ্যক্রম (Integrated Curriculum)

৫. জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম (Life Centric Curriculum)

৬. কেন্দ্রীয় বহু সাধক পাঠ্যক্রম ( Core and  Diversity Curriculum)


১. গতানুগতিক বা বিষয়ক ভিত্তিক পাঠ্যক্রম (Traditional/Classical/Subject Centriced curriculum) :- দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার সংকীর্ণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক দিকের বিকাশ ঘটানোর জন্য যে সমস্ত পাঠ্যক্রম গুলি করে উঠেছে তাকেই, Traditional, Classical, Subject Centric Curriculum বলে। যেমন -প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষার পাঠ্যক্রম।

গতানুগতিক পাঠক্রমের সুবিধা :- অনুগতিক পাঠ্যক্রমের যেসব সুবিধা গুলি রয়েছে সেগুলি হল--

১. জ্ঞানমূলক বিকাশ:- গতানুগত পাঠ্যক্রমের একটি অন্যতম সুবিধা হল জ্ঞানমূলক বিকাশ। এই পাঠ্যক্রমের জ্ঞানমূলক বিকাশের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।

২. ভাষা বোধের বিকাশ:- আনুগতিক পাঠ্যক্রমে ভাষা পদের বিকাশের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই পাঠ্যক্রমণের সাহায্যে শিক্ষার্থীর ভাষা বোধের বিকাশ ঘটে। তাই ভাষা বোধের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।

৩. সহজ সরল পাঠ্যক্রম':- গতানুগতিক পাঠ্যক্রম হলো একটি সহজ সরল পার্থ করুন। এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই শিখতে পারে। এটি  হলো একটি গতানুগতিক পাঠ্যক্রমের বড় সুবিধা।

৪. একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান:- বিষয়ভিত্তিক বা গতানুগতিক পাঠ্যক্রমের একটি বড় সুবিধা হল যে এই পদ্ধতির মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান দেওয়া যায়।

৫. ব্যয়বহুল নয়:- এই পাঠ্যক্রম হলো ব্যয়সাপেক্ষ  পাঠ্যক্রম। কিন্ত গতানুগতিক পাঠ্যক্রম ব্যায়বহুল পাঠ্যক্রম নয়।

৬. স্বল্প সময়ে অধিক জ্ঞান অর্জন:- এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কম সময় অধিক জ্ঞান অর্জন করে থাকে।

গতানুগতিক পাঠ্যক্রমের অসুবিধা:-  গতানুগতিক বা বিষয়কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের যেসব অসুবিধা বা বাধা রয়েছে সেগুলি হল:-

১. সংকীর্ণ লক্ষ্য :- এই পাঠ্যক্রমের একটি অন্যতম বাধা হলো শিক্ষার সংকীর্ণ লক্ষ কে গুরুত্ব দেওয়া। পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সংকীর্ণ লক্ষ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান কাজটি ব্যাহত হয়।

২. অমানবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি:- এই পাঠ্যক্রম হল একটি অমনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এই পাঠ্যক্রমে অমনবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

৩. সক্রিয়তা ভিত্তিক:- এই পাঠ্যক্রম হলে একটি সক্রিয়তা ভিত্তিক  পাঠ্যক্রম। এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্জন করে।

৪. শিক্ষক কেন্দ্রিক:- গতানুগতিক পাঠ্যক্রম বা বিষয়কেন্দ্রিক পার্থক্য টি  শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়।

৫. জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন:- এই পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। এই পাঠ্যক্রম শিক্ষায়দের জীবনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকে না।

৬. পরীক্ষা কেন্দ্রিক:- এই পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রিকভাবে উল্লেখ করা থাকে। পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা এর পরীক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়



২ . কর্মভিত্তিক বা কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম (work activities/work based curriculum) :- শিক্ষাকে জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে শিক্ষাক্ষেত্রে" Learning by doing নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্ত পাঠ্যক্রম গুলি গড়ে উঠেছে সেই গুলিকে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলা হয়। কর্মকানিক পাঠ্যক্রমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশিষ্ট দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ ' জন ডিই 'বলেছেন যে - "activities curriculum is a continuous extreme childs activities unblockne by systematic subjects and spring from the interest and personalty needs of the child". যেমন গান্ধীজীর প্রবর্তিত বুনিয়াদি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের কথা বলা যেতে পারে।

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সুবিধা:- কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের যেসব সুবিধা গুলি রয়েছে সেই সুবিধা গুলি হল

১. হাতে কলমে বা কর্মের মাধ্যমে শিক্ষা:- কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে মনোবিজ্ঞানিক ভিত্তিক শিক্ষাদান করা হয়। যার ফলে শিক্ষাইদের কর্ম দক্ষতার বিকাশ ঘটে।

২. সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষা।

৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক।

৪. একঘেয়েমি নয়।

৫. শৃংখলা বজায় থাকে।

৬. কর্মদক্ষতার বিকাশ।


কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের অসুবিধা:- কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের যেসব অসুবিধা গুলি রয়েছে সেগুলি হল:- 

১. সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সম্ভব নয়।

২. শিক্ষকের অভাব।

৩. উপযুক্ত বিদ্যালয়ের অভাব।

৪. সময়ের অভাব।

৫. উপযুক্ত পরিবেশের অভাব।


৩.অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমঃ Experience Curriculum):- যে পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা কে কেন্দ্র করে রচনা করা হয় , তাই হলো অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠ্যক্রমণ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক ডিউ বলেছেন "education is reconstruction and reconstitution of experience" এই ধরনের পাঠ্যক্রমের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা চাই যে পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। অভিজ্ঞ বেক্তির দ্বারা নির্বাচিত করে, অবিশন্নভাবে পাঠ্যক্রমের মধ্যে নির্দিষ্টক্রমে সন্নিবেশিত করে, সেই পাঠ্যক্রম কে বলা হয় অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠ্যক্রম।

         *মানুষ সামাজিক জীব। যে সমাজের জীবনে বসবাসকালে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সে অভিজ্ঞতার সম্বন্ধে যে সমস্ত পাঠ্যক্রম গঠিত হয়, তাকে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম বলা হয়।

শিক্ষার্থীর চাহিদা, রুচি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সমবায়ই হল অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম (Experience Curriculum)। এই অভিজ্ঞতা মূলত দুই ধরনের হয় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ।

প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাঃ - নিজে সক্রিয়ভাবে কাজে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীর যা শেখে তা হল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। যেমন, বিদ্যালয়ের কর্মশালায় অংশগ্রহণ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, সমাজসেবামূলক কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

পরোক্ষ অভিজ্ঞতাঃ -  বই পড়ে অন্যের অভিজ্ঞতার সূত্রে যে জ্ঞানলাভ করা যায় তাকে বলে পরোক্ষ অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন প্রবন্ধ পাঠ করে, ছবি বা ম্যাপ দেখে, কিংবা শিক্ষক মহাশয়ের কাছে গল্প শুনে শিক্ষার্থীরা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমে এই দুই ধরনের অভিজ্ঞতাকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

*** শিক্ষাবিদগণ মনে করেন, শিক্ষা পাঠক্রমের উপাদান হবে কতগুলি অভিজ্ঞতা, যেগুলি শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনে তার নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সহায়তা করবে। এই মৌলিক নীতি অনুসরণ করে যে পাঠক্রম রচনা করা হয় তাকে বলা হয় অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্য মুখি একগুচ্ছ অভিজ্ঞতার সমন্বয়ই হল অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম |


অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য: - এই পাঠক্রমের যেসব বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হল-

১. শিক্ষার্থীর চাহিদানির্ভর:- অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক পাঠক্রমেরর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীর চাহিদানির্ভর। শিক্ষার্থীর চাহিদাকে কেন্দ্র করে এই পাঠ্যক্রম রচিত হয়।

২. বিষয়গুলি সজ্জিত:-  এই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয় গুলি একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সজ্জিত থাকে।

৩. ফলের নীতি:- অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমেরর মূল বৈশিষ্ট্য হল ফলের নীতি (Principle of Effect)। এর ভিত্তিতে পাঠক্রম রচিত হয়ে থাকে ।

৪. অভিজ্ঞতার সম্বন্বয়: - এই পাঠক্রমের মধ্যে জ্ঞানমূলক, কর্ম মূলক ইত্যাদি সব ধরনের অভিজ্ঞতাই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সকল অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধনই হল অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক পাঠক্রম ।

৫. শিক্ষণের সমতা বজায়:- অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষণের সমতা বজায় রাখা সম্ভব হয়।

৬. কর্ম সম্পাদনের ফলের উপর গুরুত্ব :- এই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীদের কর্মসম্পাদনের ফলের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বশিক্ষণের দেওয়া হয়।

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের উপযোগিতা বা সুবিধা:--এই পাঠক্রমের উপযোগিতা গুলি হল-

(১) বৌদ্ধিক বিকাশ : - অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমে বিভিন্ন বিষয়যুক্ত জ্ঞান সঞ্জিত থাকে বলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণ প্রক্রিয়া সহজ হয়। এর দ্বারা শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে।

 (২) সামাজিক বিকাশ :-  এই ধরনের পাঠক্রমের দ্বারা শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে বলে শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত ও দলগত দিক থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্য দিয়ে শিশুদের সামাজিক বিকাশ ঘটে।

(৩) নৈতিক বিকাশ :- এই পাঠক্রমের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিসত্ত্বার উন্নতি সাধিত হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা জাগত হয় ও ভালোমন্দ বোধ জাগ্রত হয়।

(৪) চাহিদাভিত্তিক:-  এই ধরনের পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের চাহিদাভিত্তিক । কারণ বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম অনুশীলনের দ্বারাই শিক্ষার্থীদের নিজেদের চাহিদাগুলি পূরন হয়ে থাকে।

(৫) আদিম প্রবৃত্তি দূরীভূত হয় :- এই ধরনের পাঠক্রম শিশুর মধ্যেকার আদিম প্রবৃত্তিগুলিকে দূর করতে সক্ষম। আধুনিক নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে এই প্রবৃত্তিগুলি দূর হয় ।

৬. দ্বিমুখী: - অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক পাঠক্রম যেমন শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে, তেমনি শিক্ষকের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রকেও অনেক বেশি বৃদ্ধি করে।

৭. সামাজিক বোধের বিকাশঃ - এই পাঠক্রম বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সামাজিক বিকাশ ঘটায়।

৮. মনোবিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রমঃ- এই পাঠ্যক্রম মনোবিজ্ঞানসম্মত হওয়ায় শিক্ষার্থী তার চাহিদা, সামর্থ্য, প্রবণতা এবং আগ্রহ অনুসারে শিক্ষা লাভ করতে পারে।

৯. প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা: - অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১০. স্বাধীনভাবে শিক্ষালাভঃ - এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।

১১. সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব :-  এই পাঠক্রমে পারস্পরিক সহযোগিতা, দলবদ্ধতা ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের ত্রুটি:- অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের গুরুত্ব বা উপযোগিতা অনেক থাকলেও এর কিছু ত্রুটি লক্ষ করা যায়। তা হল -

১. অধিক স্বাধীনতাঃ- এই পাঠক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে সঠিক জ্ঞান আহরণে অসুবিধা সৃষ্টি করে।

২. সময় সাপেক্ষ : - সমগ্র পাঠ্যক্রমকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে শেখাতে গেলে অনেক বেশি সময় লাগে ।

৪. ব্যয়বহুল:-  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করা অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

৫. সুনিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালনার অসুবিধাঃ -এই পাঠ্যক্রম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করা হয় বলে একে সুনিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় তা পরিচালনা করা হয়ে ওঠে না। ফলে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি ব্যাহত হয়।

৪. অবিচ্ছিন্ন পাঠ্যক্রম (Integrated Curriculum):- অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বা সমন্বয়ী পাঠক্রম :- যে সমস্ত পাঠ্যক্রম শিক্ষকদের মধ্যে বিশেষ কর্মদক্ষতা , আদর্শ অভ্যাস ও জীবন আদর্শ সহায়তা করে, তাকে অবিচ্ছিন্ন পাঠ্যক্রম বলা হয়। এই প্রসঙ্গে Bossing বলেছেন যে "অবিচ্ছিন্ন কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রম হলো এমন কতগুলি প্রতিনিধি স্থানীয় নির্বাচিত অভিজ্ঞতার সমবায় সেগুলি সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্রে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে।

যে পাঠক্রম শিক্ষণীয় বিষয়গুলিকে ক্ষুদ্র অংশে বিভাজিত না করে অখন্ড ভাবে পরিকল্পিত করে তাকে সমন্বয়ী পাঠক্রম (Integrated Curriculum) বলে।

জিলার এর মতে, " ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্ক বা অনুবন্ধন স্থাপন করে বিদ্যালয়ের সব পাঠ্যবিষয়কে উপস্থিত করা যেতে পারে। "

পার্কার বলেছেন, " বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়কে উপস্থাপন করলে সেই বিষয়ে এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য বিষয় গুলি শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ ও সাবলীল হয়ে উঠে। 

হারটি, পার্কার, জিলার প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন বিষয়ের অনুবন্ধ স্থাপনের মাধ্যমে পাঠক্রম রচনার কথা বলেছেন। দর্শন, সাহিত্য, ভাষা প্রভৃতি বিষয়গুলি সমন্বিত করে সমাজবিজ্ঞানের পাঠক্রম তৈরি হবে। এইভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি।

অবিচ্ছিন্ন পাঠ্যক্রমের বৈশিষ্ট্য- অবচ্ছিন্ন পাঠ্যক্রমের যেসব বৈশিষ্ট্য গুলি রয়েছে সে গুলি হল নিম্ন রূপ -

১. অনুবন্ধের নীতি অনুসরণ:- সমন্বয়ের পাঠ্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিন্যাসের জন্য অনুবন্ধনের রীতি অনুসরণ করা হয়।

২. জ্ঞানের প্রতি অনুরাগের সৃষ্টি:- শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে বহুমুখী জ্ঞানের প্রতি অনুরাগের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এই পাঠ্যবাদের মধ্যে নিহিত থাকে।

৩. পারস্পরিক সাদৃশ্য পাঠক্রমিক বিষয়:- পাঠ্যক্রমিক বিষয়গুলি অভিজ্ঞতাগুলিকে সাধারণভাবে সারাধর্মীদের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়, যা সব শিক্ষার্থীর কাছে প্রয়োজনীয় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে পারস্পরিক সাদৃশ্য পাঠ্যক্রমিক বিষয়গুলি একটি বড় লক্ষণ।

৪. শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের সহায়তা:- এই ধরনের পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদার পরিবর্তে সামাজিক চাহিদার কথা বিবেচনা করা হয়। কারণ এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে সামাজিক সাংস্কৃতিক সঙ্গে পরিচিত করা, তাদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করার কথা বলা হয়।

৫. প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রম:-শিক্ষার প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের জন্য এই সাধারণ ধর্মী পাঠ্যক্রমের কথা বলা হয়। কারণ উচ্চ শিক্ষার বিশেষ ধর্মীয় পাঠ্যক্রম অনুশীলনের জন্য প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয় সমন্বয়ে পাঠ্যক্রমিক।

অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমের উপযোগিতা:-

১. মূল ধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্তঃ - এই পাঠক্রমে বিষয়ের অন্তর্গত তথ্যগুলিকে মূল ধারার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পর্কযুক্ত করা হয়।

২. অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্যবিধান: -অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়।

৩. সমাজ-সংস্কৃতির পরিচিতিঃ - এই পাঠক্রম চর্চার মাধ্যমে সমাজের সকল ব্যক্তি সমাজ ও সংস্কৃতির মূল ধারার সঙ্গে পরিচিত হন।

৪. পরিচালন ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ - শিক্ষক এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে-কোনো বিষয়ে পরিচালন ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায়।

৫. শিক্ষার্থীর আগ্রহের স্থায়িত্বঃ - এই পাঠক্রম প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আগ্রহের ক্ষেত্রকে একটি স্থায়ী রূপ দিতে সাহায্য করে, যার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী স্তরের বিশেষধর্মী শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করা হয়।

৬. শিখন ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সাহায্যঃ - এই পাঠক্রম শিখন ও শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

৭. জ্ঞানের সমন্বয়:-  এই পাঠক্রমে বিভিন্ন জ্ঞানের বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করে।

৮. সমাজের সমতা সৃষ্টি করা:- অবিচ্ছিন্ন তথ্য সমন্বয়ী পাঠ্যক্রম সমাজের সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা সমতা সৃষ্টি করে। সামাজিক দৃষ্টি সংস্কৃতির মূল ধারাগুলির সঙ্গে প্রত্যেকেই পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়।

৯. অনুশীলনের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি নয়:- এই পাঠ্যক্রম অনুশীলনের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বাস বিষয়গুলির অন্তর্নিহিত সম্পর্ক সূত্র পৃথকভাবে অনুশীলন করতে হয় কিন্তু এক্ষেত্রে সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না।

১০. অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ক্ষেত্র প্রসারিত:- শিক্ষন অভিজ্ঞতা গুলির মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে অভিজ্ঞতার সংরক্ষণ স্থায়ী হয়। তাছাড়া পাঠ্যক্রম অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ক্ষেত্রটি কে প্রসারিত করে।

১১. পরিচালনার সহজসাধ্য:- সমন্বয়ের পাঠ্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ বা বিশেষ ধর্মী কোন যোগ্যতার পৃথকভাবে প্রয়োজন পড়ে না। এই পাঠ্যক্রমের পরিচালনার সহজসাধ্য।

১২. সমন্বয়ক জ্ঞানের প্রতি অনুরোধ সৃষ্টি:- সমন্বয়ে পাঠ্যক্রম বহুমুখী জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রতিশিক্ষার্থীদের প্রাথমিক অনুরাগ সৃষ্টি করে, যা তাদের পরবর্তী বিশেষ ধর্মীয় উচ্চশিক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতির সহায়ক।

অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমের ত্রুটিঃ-

১.  সব বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব না- এই পাঠ্যক্রমে সব বিষয়গুলির মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব নয়।

২. কোন বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণার সমন্বয়:- বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে অনেক সময় ভ্রান্ত ধারনার সম্বন্বয় হয়।

৩. সমন্বয় সাধন যুক্তিহীন:-  কৃত্রিমভাবে পাঠক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন যুক্তিহীন।

৪. অনুবন্ধন রচনার সমান সুযোগ না থাকা:- বর্তমান জটিল এবং একইসঙ্গে প্রসারিত বহুধা জ্ঞান ক্ষেত্রে সমন্বয়ে রচনা মোটেও সহজ সরল বিষয় নয়। তাছাড়া যান্ত্রিক অনুবন্ধন রচনার প্রয়াস পাঠ্যক্রমকে দুর্বুদ্ধ করে তুলতে পারে। সুতরাং প্রথমে স্বীকার করে নিতে হবে সর্বক্ষেত্রে অনুবন্ধ রচনা সমান সুযোগ থাকে না।

৫. বাইরের জগতের অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধন:- মনোবিজ্ঞানীদের মতে মনের গতিশীল ধর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাইরের জগতের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে সমন্বয়ে সাধন করতে পারে। তাই কৃত্রিমভাবে পাঠক্রমে বিষয়গুলি সমন্বয় সাধনের কোন যুক্তি নেই।

সুতরাং এই পাঠক্রমের উপযোগিতা যেমন আছে, তেমনি সামান্য ত্রুটি রয়েছে। তবে উপযোগিতার পাল্লা ভারী। এই পাঠক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে আমাদের গতানুগতিক শিক্ষণ তার বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এই পাঠক্রমের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার তত্ত্বকে কার্যকর রূপ দেওয়া সম্ভব।


জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম :-আধুনিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল ব্যক্তি ও সমাজের সার্বিক উন্নয়ন। তাই বর্তমানে শিক্ষাবিদগণ পাঠক্রমকে শিক্ষার্থীর জীবনকেন্দ্রিক করতে আগ্রহী। ব্যক্তির জীবন বলতে শুধু তার চাহিদাজীবনকে বোঝায় না অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিনটি বিষয় নিয়ে মানুষের সামগ্রিক জীবন। সুতরাং পাঠক্রমকে জীবনকেন্দ্রিক করতে হলে পাঠক্রমের অতীত সংস্কৃতির সংরক্ষণ, শিক্ষার্থীর বর্তমান জীবনের চাহিদা পূরণ এবং ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির প্রতিফলন ঘটবে।

এই প্রসঙ্গে জন ডিউই বলেছেন, "Education is life itself and preparation for life. জীবনের জন্য শিক্ষা, শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা, মনোবিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ইত্যাদি সব ধরনের শিক্ষাগুলিরসমবায়ে যে শিক্ষা পাঠক্রমে বর্তমানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাকে জীবন কেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রম (Life Centric Curriculum) বলে।

জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য: জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য হল -

১. শিশুর চাহিদাভিত্তিক:- জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রমের উপাদান হবে শিশুর চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৯. দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তঃ - এই পাঠক্রম শিক্ষার্থী দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৩. সামাজিক চাহিদাভিত্তিক :- ব্যক্তির জীবনের কোনো বিকাশই সমাজে চাহিদাকে অপেক্ষা করে হতে পারে না। তাই এই পাঠক্রম সামাজিক চাহিদার পরিতৃপ্তি করবে।

৪. কর্মকেন্দ্রিক:-  পাঠক্রমে এমন সব বিষয় বস্তু থাকবে যেগুলি দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের জীবিকা অর্জনের কৌশলকে অর্জন করতে পারবে এবং নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে।

৫. সামাজিক অভিযোজনঃ -পাঠক্রমের বিষয়বস্তু অবশ্যই শিক্ষার্থীকে সামাজিক অভিযোজনে সাহায্য করবে।

৬. পরিবর্তনশীলঃ - ব্যক্তির চাহিদা ও সমাজে চাহিদা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। পাঠক্রমও প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যথেষ্ট গবেষণার মাধ্যমে এই পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়।

৭. সৃজনশীলতার বিকাশ; পাঠক্রম হবে সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী। অর্থাৎ এই ধরনের পাঠক্রম রচনার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির সমাজজীবন ও ব্যক্তি জীবনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন করা।

৮. মূল্যবোধ সৃষ্টি; শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যবোধ বিকাশের বিষয়গুলি অবশ্যই পাঠক্রমে থাকবে। বর্তমানে সবস্তরে অবমূল্যায়নের দিনে শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি মানবিক মূল্যবোধের সৃষ্টি না করা হয়, তাহলে শিক্ষার লক্ষ্য এবং পাঠক্রম রচনার প্রয়াস ব্যর্থ হতে বাধ্য।

সুতরাং সর্বশেষ আলোচনা থেকে বলা যায় যে, শিক্ষাকে জীবনকেন্দ্রিক করতে হলে শিক্ষার পাঠক্রম কেউ জীবন কেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে হবে। জীবন কেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি এমন ভাবে নির্বাচন করতে হবে, যেগুলি অর্জন করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলি সহজে পরিতৃপ্তি করতে সক্ষম হয়।

কেন্দ্রীয় পাঠক্রম:-যে পাঠক্রম ব্যক্তির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে রচনা করা হয় তাকে কেন্দ্রীয় পাঠক্রম বলে (Core Curriculum)।

L. Bossing বলেছেন, " কেন্দ্রীয় পাঠক্রম হল এমন কতগুলি নির্ধারিত অভিজ্ঞতার সমবায় যেগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থী জ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। মানুষের কতগুলি সাধারনধর্মী চাহিদা রয়েছে এবং ওই চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য যে পাঠক্রম প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনুশীলন করা প্রয়োজন তাকে কেন্দ্রীয় পাঠক্রম বলে বলা হয়। "

কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য:

১. জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সঞ্চার: কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষধর্মী জ্ঞান পরিবেশন না করে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সঞ্চার করা হয়।

২. সামাজিক চাহিদা সম্পর্কিত :- এই পাঠক্রমের উপাদান গুলি সামাজিক চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৩. জ্ঞানের সমন্বয়:-  এই পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞানের সঙ্গে সমাজকেন্দ্রিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো।

৪. সাধারণধর্মী জ্ঞানদানঃ - এই পাঠক্রম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান দান করে।

৫. উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিঃ - এই পাঠক্রমকে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিমূলক পাঠক্রমও বলা হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা এই পাঠক্রম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে গ্রহণ করে।

সুতরাং:- কেন্দ্রীয় পাঠক্রম ব্যবস্থাটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বহু প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাতেও মোটামুটিভাবে কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের নীতি অনুসরণ করা হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ