Ticker

100/recent/ticker-posts

Translate

মন্তেশ্বরির শিখন পদ্ধতি? পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা অসুবিধা আলোচনা কর!

 মন্তেশ্বরির শিখন পদ্ধতি? পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা অসুবিধা আলোচনা কর!



শিক্ষণ পদ্ধতি:- মন্তেশ্বরির শিক্ষানীতির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শিখন পদ্ধতি। বিশেষভাবে তিনি শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে নানা দিক থেকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন। তার শিখন পদ্ধতির প্রধানত তিনটি মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

১. ইন্দ্রিয় পরিমার্জনের শিখন পদ্ধতি:- সেন্স Training ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই মানুষ বহির্জগত থেকে জ্ঞান আহরণ করে, তিনি মনে করতেন। মানসিক অনুগ্রহ সড়তার জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী হলো ত্রুটিপূর্ণ ইন্ড্রিয়ের অক্ষমতার দরুন অনুগ্রসতার দেখা যায়। তাই শিশুকে শিক্ষা দিতে হলে প্রথমে তার ইন্দ্রিয়ের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।

২. স্বয়ংসিক্ষা বা আত্মশিক্ষণ (Auto Learning) :- মন্তেশ্বরী তার পূর্বসূরীদের মতো শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে আত্ম প্রচেষ্টার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার্থীরা যখন নিজে কোন জিনিস শিখবে, তখন তাদের তারা আনন্দ পাবে এবং শিক্ষা তাদের কাছে অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।  ডিটেকটিক যন্ত্র শিক্ষাদীদের ভুল ও ত্রুটি দূর করার জন্য আচরণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার ফলে সব রকম মানসিক ক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে সহজে শিক্ষাদান করা যায়। এই ধরনের শিখন পদ্ধতিকে তিনি স্বয়ংশিক্ষা বা আত্মশিক্ষণ নাম দিয়েছেন।

৩. স্বাধীনতার নীতি:- শিক্ষার্থীদের স্বয়ং শিক্ষার সুযোগ দিতে হলে তাকে অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে মন্তেশ্বরী শিশুকে কাজ করার অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে। তুমি এই স্বাধীনতাকে শিক্ষার একমাত্র যোগ্য মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

শিক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য:- মন্তেশ্বরী পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কের নিচে আলোচনা করা হলো

১. অবাধ স্বাধীনতা:- পরিপূর্ণ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শিশুর মনের বিকাশ সাধনই হলো এই পদ্ধতির প্রধান লক্ষ্য।

২. সক্রিয়তা:- এই পদ্ধতিতে শিশু প্রচেষ্টার দ্বারা শিক্ষা করবে। শিক্ষিকার ভূমিকা হবে, নিরব দর্শকের মত। শিশুর স্বত: ফুর্তভাবে  কতগুলি কাজের ভিতর দিয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করবে।

৩. ইন্দ্রিয় অনুশীলন:- ইন্দ্রিয় অনুভূতির উৎকর্ষ সাধনের জন্য এই পদ্ধতিতে কতগুলি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যবস্থা আছে। শিশু যন্ত্রপাতি গুলি নিয়ে খেলার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের ইন্দ্রিয় অনুভূতি পরিমার্জিত হবে।

৪. ব্যক্তি স্বতন্ত্র:- এই পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ব্যক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষা। প্রত্যেক শিশুরই নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা আছে।

৫. জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জনা:- জ্ঞান ইন্দ্রিয় গুলি হল চক্ষু ,কর্ণ , নাসিকা ও ত্বক । এগুলি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু যাতে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে, তার জন্য কতগুলি খেলনার উদ্ভাবন করেন। এই খেলনাগুলিকে ডিটেকটিক অ্যাপ্রেটাস বলা হয়।

৬. কর্ম ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জনা:- কর্ম ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জনার জন্য শিশু নিরব ও সুঠাম শরীরের অধিকারী হয়। তাই এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের কর্মের কথা বলা হয়েছে। যেমন -দোল নাই দোলা, গাছে চড়া, সাঁতার কাটা প্রভূতি।

৭. পেশী গত শিক্ষা:- মন্তেশ্বরী পদ্ধতিতে শিশুর বিভিন্ন কর্মের মধ্য দিয়ে বেশি গত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এর জন্য কতগুলি কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন -বসা ,চলা, হাটা , শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রভুতি।

৮. শৃঙ্খলা:- শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে সক্রিয় থাকে ফলে তাদের মধ্যে স্বত:প্রসূত শৃঙ্খলা গড়ে ওঠে।

        ❇️✳️  মন্তেশ্বরী তার শিক্ষা চিন্তায় শিশুর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার আন্দোলনকে তিনি আরো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শিশুদের সহানুভূতিশীল মনোভাবের সংঘ দেখা নির্দেশ দিয়েছেন। তার কাছে শিশুরা হলো ভগবানের অংশ আর শিক্ষালয় হলো মন্দির। তিনি তার নীতি কে প্রয়োগ করার জন্য যে 'শিশু নিকেতন' স্থাপন করেন।

সুবিধা:- মন্তেসরি পদ্ধতির সুবিধা গুলি হল নিম্নরূপ

১. স্বাধীনতা:- এই পদ্ধতিতে শিশুকে ইচ্ছামত আচরণ করার ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ শিশুকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

২. স্বতঃস্ফূর্ত  শৃঙ্খলা :- শৃঙ্খলা আসে স্বাধীনতা ভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে। শিশুরা স্বাধীনভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

৩. সক্রিয়তা:- এই পদ্ধতিতে শিশু স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজের ভিতর দিয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করে, ফলে তারা সবসময় সক্রিয় থাকে।

৪. ইন্দ্রিয় অনুশীলন:- এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে শিশুদের ইন্দ্রিয় অনুশীলন হয়ে থাকে।

৫. ব্যক্তি মুখী:- এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত বৈষম্যের তত্ত্ব অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া হয় ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভ করতে সুবিধা হয়।

৬. পেশীগত সঞ্চালন :- এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে শিশুদের পেশীগত সঞ্চালন হয়ে থাকে ।

৭. কর্ম ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জন:- এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন দোলনায় দোলা, জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখা, হাটা, চলা,বসা, প্রভূতির মধ্য দিয়ে শিশুদের কর্ম ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জন হয়ে থাকে।

অসুবিধা:- মন্তেশ্বরী পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও কিছু কিছু দিক থেকে আবার অসুবিধাও দেখা যায়। সেগুলি হল --

১. আত্মপ্রকাশের সুযোগ কম:- এই পদ্ধতিতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ কম। কারণ নির্দিষ্ট উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ফলে শিশুর স্বাধীন চিন্তা করার অবকাশ খুব কম থাকে।

২. গঠনমূলক ও সৃজন মূলক কাজের সুযোগ কম:- এই পদ্ধতিতে শিশুদের গঠনমূলক ও সৃজনমূলক কাজের সুযোগ কম থাকে।

৩. শিক্ষামূলক সরঞ্জাম:- স্বয়ং শিক্ষার জন্য যে সকল শিক্ষামূলক সরঞ্জাম বা ডিটেকটিক অ্যাাপ্রেটাসগুলি রয়েছে সেগুলিকে শিশু যান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করে, ফলে অভিজ্ঞতা অর্জনে তাদের কাছে গৌণ হয়ে পড়ে।

৪. মানসিক ক্ষমতা:- এই পদ্ধতিতে মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধির চেয়ে ইন্দ্রিয় পরিমার্জনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে মানসিক ক্ষমতার বিকাশ ভালোভাবে হয় না।

৫. সমন্বয়ে ধর্মী পাঠদান :- এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিষয়গুলিকে সমন্বিত করে পাঠদান করা হয় না। কিন্তু বর্তমানে খেলা অথবা প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে সম্মানিত করে পাঠদান করায় উৎকৃষ্ট শিক্ষা পদ্ধতি বলে বিবেচিত হয়েছে।

৬. ব্যয়বহুল:- ভারতের মতো গ্রাম প্রধান দরিদ্র দেশে এত ব্যয়বহুল শিক্ষার সাজ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত সু কঠিন কাজ।

৭. প্রতিভাবন শিশুদের ক্ষেত্রে অনুপযোগী:- প্রতিভাবন শিশুদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকরী নয়। নিম্নমানের শিশুদের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা থাকলেও উচ্চমানের শিশুদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুপযোগী।

উপসংহার:- সুতরাং বলা যায় যে, পদ্ধতির বহু অসুবিধা থাকলেও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই পদ্ধতির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Thank you