পাঠ্যক্রম রচনার বা গঠনের নীতি গুলী আলোচনা করো!
ভূমিকা:- শিক্ষার সফলতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে পাঠক্রমের উপর। তাই আধুনিককালে শিক্ষাবিজ্ঞানে পাঠক্রম রচনার কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাঠক্রম রচনার মূল নীতিগুলি ছকের আকারে নীচে দেওয়া হল—
পাঠক্রম রচনার নীতিসমূহ :-
A. বিষয়বস্তু সংক্রান্ত নীতি (Content Related Principles)
1. উদ্দেশ্যকেন্দ্রিকতার নীতি: পাঠক্রমের জন্য অভিজ্ঞতা নির্বাচনের সময় শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলির দিকে নজর রাখতে হবে।
2. শিশুকেন্দ্রিকতার নীতি: শিশুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি যেমন—শিশুর পরিণমনের স্তর, তার আগ্রহ, জৈবিক, মানসিক, সামাজিক চাহিদা ইত্যাদি বিকাশের সহায়ক পাঠক্রম রচনা করতে হবে।
3. সমাজকেন্দ্রিকতার নীতি: পাঠক্রমের বিষয়বস্তু, সমাজের চাহিদার (অভিযোজন, পরিবর্তন, উৎপাদন বৃদ্ধি) কথা বিবেচনা করে নির্বাচন করতে পারলে তবেই তা জীবনকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে।
4. সংরক্ষণের নীতি: পাঠক্রমের বিষয়বস্তু এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে অতীত অভিজ্ঞতার সংরক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সঞ্চালন বজায় থাকে।
5. সৃজনশীলতার নীতি: পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সৃষ্টিধর্মী প্রতিভাকে বিকাশের সুযোগদানের নীতিকে মূর্ত করে তোলা প্রয়োজন।
6. অগ্রমুখীনতার নীতি: পাঠক্রমের বিষয়বস্তু এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যার সহায়তায় শিক্ষার্থীকে চিরপরিবর্তনশীল ও প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ জীবন পরিবেশে অভিযোজনের যোগ্য প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় ।
7. অখণ্ডতার ও অবিভাজ্যতার নীতি: পাঠক্রম কখনও বিভিন্ন দৃঢ় দেওয়াল দিয়ে বিভক্ত হতে পারে না।
B. বিষয়বস্তু বিন্যাসের নীতি (Principles of Content Arrangememnt)
1. সমন্বয়ের নীতি: সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাহিদার সমন্বয়ের নীতির উপর ভিত্তি করেই পাঠক্রম রচনা করা বাঞ্ছনীয়।
2. ক্রমবিন্যাসের নীতি: পাঠক্রমের বিষয়বস্তুগুলিকে শিশুর পরিণমন, বিষয়বস্তুর কাঠিন্যমান ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে ক্রমপর্যায়ে বিন্যস্ত করতে হবে।
C. ক্রিয়াগত নীতি (Principles of Activity) :-
1. কর্মকেন্দ্রিকতার নীতি: পাঠক্রম রচনার নীতি হিসেবে মূর্ত কর্মভিত্তিক বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
2. পরিবর্তনশীলতার নীতি: পাঠক্রম কখনোই অনমনীয় হতে পারে না। সমাজ সভ্যতার পরিবর্তনে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনের পরিবর্তন ঘটলে পাঠক্রমের যে পরিবর্তন হবে তা বলাই বাহুল্য।
3. বৈচিত্র্যের নীতি: পাঠক্রমে শুধু শিক্ষার্থীর কর্মময় জীবনের প্রস্তুতিই থাকবে না, তার অবসর সময়ের সুস্থ ব্যবহারের নির্দেশও থাকবে।
4. বহুমুখীনতার নীতি: বিভিন্ন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন প্রকৃতির চাহিদাপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে পাঠক্রমে।
5. জীবনমুখীনতার নীতি: শিক্ষার্থীর জীবনের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতাকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা নীতিগতভাবে খুবই প্রয়োজন।
6. বৃত্তিমুখী নীতি: পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বৃত্তির প্রাথমিক পরিচয় দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা আবশ্যিক।
7. সময়সূচির নীতি: রুটিনে বিভিন্ন বিষয়বস্তু গুরুত্ব অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করাও পাঠক্রম রচনার একটি মূলনীতি।
৪. শিখনের প্রয়োজনীয়তার নীতি: পাঠক্রমের বিষয়বস্তু শুধু শিখনযোগ্য হলেই হবে না, তার নির্দিষ্ট উপযোগিতাও থাকতে হবে।
উপসংহার: উপরোক্ত নীতিগুলির পটভূমিতে এটুকু স্পষ্ট যে, সকল শিক্ষার্থীর জন্য একই ধরনের পাঠক্রম কখনোই বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পার্থক্যকে (Individual Difference) স্বীকৃতি দিয়ে পাঠক্রমের মধ্যে বিভিন্নতা আনতেই হবে।
বিদ্র:- আজকের আলোচনাটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে । এবং এরকম নিত্য নতুন যে কোন বিষয় নিয়ে আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে চাইলে তোমরা সেই অ্যাপটিকে ডাউনলোড করতে পারো। অ্যাপটিকে ডাউনলোড করার জন্য নিচের আইকন বাটনটিতে ক্লিক করো।

.jpg)


0 মন্তব্যসমূহ
Thank you