Ticker

100/recent/ticker-posts

Translate

B.A 1st Semester Education Assignment Report তৈরি পদ্ধতি

নমস্কার প্রিয় বন্ধুরা তোমরা যারা B.A  1st Semester  ভর্তি হয়েছো এবং তোমাদের কলেজ থেকে তোমাদের মেজর সাবজেক্টের প্রজেক্ট লিখতে দিয়েছে। তো অনেকেই সেই প্রজেক্টটা কিভাবে লিখতে হবে, কিংবা কিভাবে সাজাতে হবে। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোথায় পাবে এইসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তো তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই । কারণ আজ "স্বপ্ন তোমার শিক্ষা" নিয়ে এসেছে তোমাদের সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান

   প্রথমে তোমাদের একটা Front page 📃 তৈরি করতে হবে, তারপর একটা পেজ এ কৃতজ্ঞতা স্বীকার, সূচিপত্র, প্রশ্নের উত্তর, সবশেষে লিখতে হবে গ্রন্থপঞ্জি। 

১. Front Page 📃:- যেখানে তোমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ,নিজের নাম, রোল নাম্বার, সাবজেক্ট এর নাম, স্টুডেন্ট আইডি ,সেমিস্টারের নাম, মোবাইল নাম্বার ,রেজিস্ট্রেশন নাম্বার , ABC 🆔 এই সমস্ত বিষয়গুলি লেখা থাকবে।

২. কৃতজ্ঞতা স্বীকার:- আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের কলেজের শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের মাননীয় শিক্ষক শ্রী দূর্জয় মন্ডল -এর প্রতি, কারণ তাঁর আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এই "PROJECT REPORT" তৈরি করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেইসব শ্রদ্ধেয় শিক্ষক/শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকাদের, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে  "School of western philosophy -Idealism and Naturalism (main features and educational implications) " PROJECT REPORT তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করেছেন। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেইসব সহপাঠীদের, যারা REPORT এর কাজে এবং PROJECT REPORT বা  ASSIGNMENT তৈরি করতে কোনো-না-কোনোভাবে সাহায্য করেছে। এই ভাবে লিখতে হবে।

৩. সূচিপত্র:- সূচিপত্রে যে প্রশ্নগুলো উত্তর লিখবে এবং কত নম্বর পাতায় লেখা রয়েছে কোন কোন বিষয়গুলি লেখা আছে সেই বিষয়গুলি পাতায় উল্লেখ করে সূচিপত্রে তোমাকে লিখতে হবে।

৪. প্রশ্নের উত্তর:- প্রশ্নের উত্তর অর্থাৎ তোমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে বিষয়ে প্রজেক্ট বা প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলেছে সেটা লিখতে হবে। যেমন:- কালিয়াচক কলেজের দুটো প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলেছে তার মধ্যে যে কোন একটা লিখতে হবে। সে প্রশ্ন গলি হল 1. Delor’s Commission report Or 2. School of western philosophy -Idealism and Naturalism (main features and educational implications)

৫. গ্রন্থপঞ্জি:- গ্রন্থপঞ্জি অর্থাৎ তুমি যে উত্তরটা লিখেছ সেটা কোন বই থেকে লিখেছ এবং কোন পাবলিশারে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি লিখতে হবে একটা পেজে। সুশীল রায়:- শিক্ষা তথ্য ও শিক্ষা দর্শন।

Publisher: Amarendra Chakraborty,On behalf of Soma Book Agency
42/1 Beniatola Lane, Kolkata-700 009

আমি তোমাদের School of western philosophy -Idealism and Naturalism (main features and educational implications) এই প্রশ্নের উপর কীভাবে project বা Assignment লিখতে হবে সেটা আলোচনা করবো।

ভূমিকা :-পাশ্চাত্য  দর্শন  একটি আলোচনা শাস্ত্র সত্যের বিচার বিশ্লেষণ এবং যুক্তিনির্ভর তত্ত্ব নির্ধারণকেই পাশ্চাত্য দর্শনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাত্ত্বিক বিচারের অভাব না থাকলেও, জীবনবোধের অভাব অত্যন্ত প্রকট। তবে এর অর্থ এই নয় যে পাশ্চাত্য দর্শন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা। দর্শন সবক্ষেত্রেই জীবনের সঙ্গে যুক্ত। পাশ্চাত্য দর্শনও জীবনের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি চরম উপলব্ধির সঙ্গে যুক্ত না হয়ে তা যুক্ত হয়েছিল, জীবনের বাহ্যিক দিকগুলির সঙ্গে। তাই পাশ্চাত্য দর্শনগুলির সঙ্গে শিক্ষার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক দেখা যায়। সংগঠিত প্রথাগত শিক্ষা (Organised formal education) পাশ্চাত্য দর্শনের বিকাশ সমকালীন হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবে পাশ্চাত্য দর্শনের প্রভাব শিক্ষার উপর অনেক বেশি পড়েছে। পাশ্চাত্য দর্শনের কয়েকটি মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করলে, আধুনিক শিক্ষাকে কীভাবে সেগুলি প্রভাবিত করেছে, তা সহজে উপলব্ধি করা যাবে। এখানে বিশেষভাবে পাশ্চাত্য দর্শনের ভাববাদ, বস্তুবাদ বা প্রকৃতি বাদ এবং প্রয়োগবাদ আলোচনার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। কারণ, শিক্ষায় এই মতবাদগুলির প্রভাবই সবথেকে বেশি এবং স্পষ্ট।

পাশ্চাত্য  দর্শন  :- সত্যের বিচার বিশ্লেষণ এবং যুক্তিনির্ভর তত্ত্ব নির্ধারণকেই পাশ্চাত্য দর্শন বলে।

ভাববাদী দর্শন :- পাশ্চাত্য দার্শনিক মতবাদগুলির মধ্যে ভাববাদ (Idealism) সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর আলোচনার মধ্যে এই মতবাদের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এই মতবাদে বিশ্বাসী দার্শনিকগণ জীবজগৎ সহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে এক ভাবমূলক সত্তার বা আধ্যাত্মিক সত্তার (Spiritual) অংশ হিসাবে বিবেচনা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, জড় জগৎ ছাড়াও আর একটি জগৎ বর্তমান, আর সেই জগৎই প্রকৃত সত্য এবং নিত্য। এই জগৎকে তাঁরা বলেছেন 'ভাবজগৎ' বা 'আধ্যাত্মিক জগৎ' এই জগতের অধীশ্বর হলেন সর্বজনীন মনের অধিকারী ঈশ্বর। যা কিছু সত্য হিসাবে বিবেচিত তা এই মনেরই সৃষ্টি। একক ব্যক্তির মন হল, ঈশ্বর বা সর্বজনীন মনের অংশ মাত্র। মানবসত্তার লক্ষ্য হল এই ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা। ভাববাদীগণ বলেছেন, ঈশ্বর যেমন চিরন্তন সত্য, তেমনি জীবনের মূল্যবোধগুলিও চিরন্তন সত্য (values of life) জীবনের মূল্যবোধগুলি যেমন নতুন ভাবে সৃষ্টি করা যায় না, তেমনি সময়ের ব্যবধানে সেগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না বা তাদের অবমূল্যায়ন হয় না। এই চিন্তাধারায় ভারতীয় দর্শনের "সত্যম শিবম সুন্দরম্" এই মূল সুরটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

              শিক্ষাক্ষেত্রে যে সকল পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ ভাববাদী দর্শনের মূল সূত্রটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে প্লেটো (Plato), কমিনিয়াস (Cominius) কান্ট (Kant) পেস্তালাৎসি (Pestalozzi) এবং ফ্রয়েবেলের (Froebel) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ গান্ধিজির শিক্ষাচিন্তার
মধ্যেও যে ভাববাদী দর্শনের রেশ খুঁজে পাওয়া যায়, তার মূল কারণ, ভাববাদের সঙ্গে উপনিষদের চিন্তাধারার আংশিক সাদৃশ্য। ভাববাদী শিক্ষাদার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন, মানুষের মন যেহেতু সর্বজনীন মনেরই অংশ সেহেতু প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে একটি আধ্যাত্মিক সত্তা। মানুষ যে সর্বজনীন সত্তারই একটি অংশ, সেই জ্ঞান তাকে তার জীবন পরিসরের মধ্যেই উপলব্ধি করতে হবে। এই উপলব্ধির মধ্য দিয়েই মানুষ চিরন্তন সত্য যে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর তাকে উপলব্ধি করতে পারবে। অর্থাৎ আত্মোপলব্ধির মাধ্যমেই জীবনের পরম সত্যকে উপলব্ধি করা সম্ভব। ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী শিক্ষাবিদ গণ মনে করেন, প্রকৃত শিক্ষাই ব্যক্তিকে এই আত্মোপলব্ধিতে সাহায্য করে। বিশিষ্ট চিন্তাবিদ রাস্ক (Rusk) বলেছেন-"Education is expected to enlarge the boundaries of the spiritual realm" অর্থাৎ, শিক্ষা হল ব্যক্তির জন্মগত আধ্যাত্মিক সত্তার সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া। ভাববাদী- দার্শনিকগণ শিক্ষার এই তাত্ত্বিক তাৎপর্যটি শুধুমাত্র ব্যক্ত করে তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেননি, তাঁরা শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়েও তাঁদের অভিমত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, শিক্ষাকে একটি পরিপূর্ণ নতুনরূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন

ভাববাদীদের মূল বৈশিষ্ট্য:- ভাববাদদের মতে মূল বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ-

1. আত্ম উপলব্ধি:- 'ভাবজগৎ' বা 'আধ্যাত্মিক জগৎ' এই জগতের অধীশ্বর হলেন সর্বজনীন মনের অধিকারী ঈশ্বর।ভাববাদী
শিক্ষাদার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন, মানুষের মন যেহেতু সর্বজনীন মনেরই অংশ সেহেতু প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে একটি আধ্যাত্মিক সত্তা। মানুষ যে সর্বজনীন সত্তারই একটি অংশ, সেই জ্ঞান তাকে তার জীবন পরিসরের মধ্যেই উপলব্ধি করতে হবে।

2. পরম মন :- আত্মোপলব্ধির মাধ্যমেই জীবনের পরম সত্যকে উপলব্ধি করা সম্ভব। ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী শিক্ষাবিদ গণ মনে করেন, প্রকৃত শিক্ষাই ব্যক্তিকে এই আত্মোপলব্ধিতে সাহায্য করে।

3. বাস্তব জগতের প্রক্ষিপ্ত রূপ :- পার্থিব জগতে সত্য বলে প্রতিভাত হয় তা মনেরই সৃষ্টি। মনই তাই বাস্তবজগতে প্রক্ষিপ্ত করে।

4. ধারণা এবং উদ্দেশ্যসমূহের অস্ত্যর্থক বাস্তবতা (realities of existence) আছে।

5. ব্যস্তিত্ব অখণ্ড সমন্বয়িত সত্তা।

6. জ্ঞান এবং মূল্যবোধ অর্জন :- জ্ঞান এবং মূল্যবোধ সার্বজনীন এবং শাশ্বত মনন অথবা আধ্যাত্মিক দৃষ্টির সাহায্যে তা অর্জন করা যায়।

7. মনন ও অনুভব উপলব্ধি :-  মনন ও অনুভবের সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ হল যুক্তিতর্ক ব্যতিরেকে ধ্যান মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উপলব্ধি বা স্বজ্ঞা (Intution) ।

 


শিক্ষায় ভাববাদের প্রভাব :- শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় কীভাবে ভাববাদ দ্বারা প্রভাবিত হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. শিক্ষার লক্ষ্য  :-শিক্ষার লক্ষ্য কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ভাববাদী দার্শনিকগণ বিশেষভাবে শিক্ষার্থীর  আত্মোপলব্ধির (Self-realization) উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁরা বলেন যেহেতু মানুষ আধ্যাত্মিক জীব, যেহেতু তার একটি ভাবমূলক জীবন বর্তমান, সেহেতু তাকে তার সেই ভাবময় শ্রীধন সম্বন্ধে সচেতন করে দেওয়াই হবে শিক্ষার লক্ষ্য। এই মতবাদ অনুযায়ী, শিক্ষা, শিশুর মনে নতুন কিছু বিষয় প্রবেশ করানোর চেষ্টা করবে না; তার মধ্যে অন্তর্নিহিত বা সুপ্ত যে সম্ভাবনা আছে, তাকে পরিস্ফুট করে তুলতে সহায়তা করবে। স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা প্রসঙ্গে আলোচনায় বলেছেন- Escation is the manifestation of perfection already in man" অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের যে গুণগুলি বর্তমান, সেগুলিকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হতে সহায়তা করাই শিক্ষার লক্ষ্য। বিভিন্ন ভাববাদী দার্শনিকগণ শিক্ষার যে লক্ষ্যের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলির মধ্যে অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গিই বক্ত হয়েছে। অর্থাৎ ভাববাদী দর্শন অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য বস্তুকেন্দ্রিক নয়; তার লক্ষ্য আত্মকেন্দ্রিক। আত্মকেন্দ্রিকতা সর্বজনীন নীতিবোধ মূল্যবোধ সঞ্চারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সর্বজনীন পরম সত্যকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করে তার বিকাশ সাধন করাই, ভাববাদী শিক্ষাদার্শনিকগণের মতে শিক্ষার লক্ষ্য।


2. শিক্ষার পাঠ্যক্রম:- শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ভাববাদীগণ পাঠ্যক্রম (Curriculum) সম্পর্কে যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, তার মধ্যেও অভিনবত্ব লক্ষ করা যায়। তাঁরা বলেছেন, সর্বজনীন আধ্যাত্মিক সভা (Spirit) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তিনটি দিকে প্রকাশমান-বৌদ্ধিক (Intellectual), নৈতিক (Moral) এবং নান্দনিক (Aesthetic) একক মানুষের জীবনীশক্তির এই ত্রিমুখী প্রভাবের মূলে মানুষের তিন প্রকারের চাহিদাকে সক্রিয় দেখা যায়। এগুলি হল জ্ঞানের চাহিদা, ভক্তির চাহিদা এবং কর্ম বা, সক্রিয়তার চাহিদা। ভাববাদীদের মতানুযায়ী পাঠ্যক্রম হবে, শিক্ষার্থীর জীবনের এই তিনটি দিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ, পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে এমন কতকগুলি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করতে হবে, যেগুদ তার বৌদ্ধিক, নৈতিক এবং নান্দনিক চাহিদাগুলিকে পরিতৃপ্ত করবে এবং তার মধ্য দিয়ে তার ভাবময় জীবনের উন্নতি সাধন করবে।

3. শিক্ষণ পদ্ধতি:- শিক্ষার্থীর অন্তনিহিত মহৎ সম্ভাবনাগুলির স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকেই ভাববাদীগণ শিক্ষা হিসার বিবেচনা করেছেন। শিক্ষণপদ্ধতি সম্পর্কে যে সব ভাববাদী শিক্ষাদার্শনিক বিশেষভাবে আলোচন করেছেন, তাঁরা শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ততার উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যেমন, ফ্রয়েবেল, পেস্তালাংদি প্রভৃতি শিক্ষা দার্শনিকগণ শিক্ষণপদ্ধতি (Teaching method) রচনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বা শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তা (Spontaneous self-activity) এবং খেলার (Play) উপর গুরুত্ব আরোগ করেছেন। ভাববাদীগণ মনে করেন প্রত্যেক বাক্তি আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়েই সর্বজনীন আধ্যাত্মিক চেতনাকে উপলব্ধি করতে পারে। আর এই আত্মোপলব্ধি কখনও আরোপিত হয় না। তাই আত্মোপলব্ধি। জন্য আত্মপ্রচেষ্টার উপরই নির্ভর করতে হবে। ঋষি অরবিন্দ তাঁর শিক্ষা চিন্তায়, ভাববাদী দর্শনের এই মূল সূত্রটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, "The first principle of true teaching is thư nothing can be taught" তাই ফ্রয়েবেল, পেস্তালাৎসির মতো ভাববাদী শিক্ষাদার্শনিকগণ তাঁদে সংগঠিত শিক্ষণপদ্ধতির মধ্যে এই আত্মসক্রিয়তার মূল নীতিকে ভিত্তি করে, সক্রিয়তা সহায়ক বিভিন্ন কার্যাবলিকে একত্রিত করেছেন।


4. শিক্ষকের দায়িত্ব:- ভাববাদীদের মতে, যে ব্যক্তির পরিপূর্ণ আত্মোপলব্ধি হয়েছে, তিনিই প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। শিক্ষক তাঁর জীবনাদর্শ ব্যক্তিত্বের গুণাবলির দ্বারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করবেন। শিক্ষক তাঁর নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আত্মোপলব্ধিতে সহায়তা করবেন। অর্থাৎ শিক্ষকের কাজ গতানুগতিকভাবে জ্ঞান বিতরণ করা নয়। ভাববাদী দর্শনানুযায়ী শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সহায়ক (Helper) এবং পথ নির্দেশকের (guide) দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঋষি অরবিন্দ শিক্ষক সম্পর্কে ভাববাদী দার্শনিকগণের দৃষ্টিভঙ্গিটি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন "The teacher is not an instructor or taskmaster, he is a helper and guide. He does not call forth the knowledge that is within, he only shows him (pupil) where it lies and how it can be habituated to surface" একজন ভালো পথ প্রদর্শকের (guide) পথের নিশানা সম্পর্কে যেমন সম্যক জ্ঞান থাকে, তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষকেরও জীবনাদর্শ অভিমুখী পথে চলার পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। এটিই ভাববাদী দর্শনের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশিত।


5. বিদ্যালয় শিক্ষালয়:-ভাববাদী শিক্ষা দর্শনে শিক্ষালয় (School) সম্পর্কিত ধারণার মধ্যেও অভিনবত্ব বর্তমান। এই দার্শনিক মতবাদ অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূলে যে সর্বজনীন আধ্যাত্মিক সত্তা বিরাজমান, উতে উপলব্ধি করাই শিক্ষার চরম লক্ষ্য। সুতরাং সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে হলে, শিক্ষা পরিবেশের ময়ে বিশেষত্ব আনা একান্তভাবে প্রয়োজন। ভাববাদী দার্শনিকগণ মনে করেন, সার্বজনীন আধ্যাত্বিক সত্তার মাধ্যমেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এক ঐক্য (unity) বিরাজ করছে। সেই ঐক্যকে যদি হহৃদয়ে উপলব্ধি করতে হয় তবে শিক্ষাপরিবেশে বা শিক্ষালয়ের জীবনে, সেই ঐক্যের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ আদর্শ শিক্ষালয় হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিরূপ (Epitome of the world) যেখানে বাড়ি সমাজ, বিশ্বপ্রকৃতি সব কিছুই বর্তমান। এই ধরনের শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই নিজের আধ্যাত্মিক সত্তাকে উপলব্ধি করবে, অন্যান্য সহপাঠীদের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক সত্তাকে উপলব্ধি করবে এবং সবশেষ পর্যায়ে বিশ্ব-আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারবে।

6. শান্তি শৃঙ্খলা:- ভাববাদী শিক্ষাদাশনিকগণের শৃঙ্খলা (Dicipline) সংক্রান্ত ধারণা তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে গড়ে উঠেছে। তাঁরা মনে করেন, আত্মোপলব্ধির প্রয়াসে আয়শৃঙ্খলা (Self-discipline) একান্তভাবে প্রয়োজন। বিশৃঙ্খল মানসিক পরিমণ্ডলের মধ্যে আত্মোপলব্ধি অসম্ভব। তবে সেই শৃঙ্খলা বাইরে থেকে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যে দিয়ে আসতে পারে না। কারণ, আরোপিত বিধিনিষেধ, বিকাশমান আত্মা বা অহংসত্তাকে যেভাবে শৃঙ্খলিত করে, তা প্রকৃত আত্মোপলব্ধি অভিমুখী নয়। ভাববাদী দার্শনিকগণ বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলার কথা ভাবা হচ্ছে তা হবে অন্তঃজ এবং স্বতঃস্ফূর্ত। সেখানে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তায়, চিন্তায় বা স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় কোনো বাধা দানের প্রচেষ্টা থাকবে না; সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতা বজায় থাকবে। স্বাধীন সক্রিয়তাভিত্তিক এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলাকে 'মুক্ত শৃঙ্খলা' নামে অভিহিত করা হয়েছে।

               উপসংহার:-
ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার বিভিন্ন দিককে তাঁদের এই চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত করেছেন। সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার প্রয়াসে তাঁরা এক বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভাববাদী শিক্ষাবিদগণের শিক্ষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত বিশেষ ধারণাগুলি যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে পারলে শিক্ষা হবে সর্বাঙ্গসুন্দর এবং তা মানুষকে আদর্শজীবনবোধ সমাজব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে, এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষার পাঠ্যক্রম, পদ্ধতি ইত্যাদি সকল দিকেই ভাববাদ শিক্ষাকে সংকীর্ণতা মুক্ত করে তাকে এক সর্বজনীন আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ভাববাদী আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত শিক্ষা, বিশ্ব মানবাত্মার প্রকৃতি উপলব্ধিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে। তবে এই প্রসঙ্গে স্মরণ রাখার দরকার, এই ভাববাদী দর্শনও অভিব্যক্তির স্তরে নানা সময়ে বিকৃত হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ভাববাদী দর্শনের সেই বিকৃতরূপ শিক্ষাদর্শনকে প্রভাবিত করেছে।

প্রকৃতিবাদ দর্শন :- ভাববাদী দর্শন যেখানে জ্ঞান বুদ্ধির অগম্য 'অতীন্দ্রীয় সত্তা বা আত্মা' (transcendental self) কে উর্ধ্বে তুলে ঘরে প্রকৃতিবাদ সেখানে 'স্বভাবজ ব্যক্তিগত সত্তা বা আত্মা' (Natural self)- ওপর জোর দেয়। এই দর্শন অনুযায়ী এই আত্মসত্তাকেই প্রকৃতি বিষয় (reality) রূপে ধরা হয়। বিশিষ্ট প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণের মতে মানুষের সহজাত আত্মপ্রকৃতি যা নিয়ে সে জন্মায় এবং তার পারিপার্শ্বিক যে প্রাকৃতিক বা বস্তুজগতে সে জন্মায় তাই একমাত্র সত্য (only reality)প্রকৃতিবাদ অনুযায়ী 'স্বভাবজ প্রকৃতির সাহায্যে পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সম্পূর্ণতা উপলখিই মানবজীবনের অন্তিম লক্ষ্য' (Realisation of the perfection of nature through nature is the ultimate goal of human life) এই বিশ্বজগতের সব কিছুরই অবস্থান 'প্রকৃতি' মধ্যে। 'প্রকৃতি' বাইরে 'পরম' বা 'চরম' (Absolute) কোনো সত্তাই অবস্থান করে না। ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক বস্তুজগত (material world)- প্রাকৃতিক জগৎ (natural world) ব্যক্তি মানুষ এই 'প্রাকৃতিক জগৎ' (natural world) তথা বস্তুজগৎ' (material world)-এর অতিচ্ছেদ্য অংশ। এই বস্তুজগৎ কতকগুলি বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং মানুষকেও এই বস্তুজগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এই সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। প্রকৃতির অনেক কিছুই প্রাথমিকভাবে মানুষের দৃষ্টির বাইরে থাকতে পারে। মানুষকে তা আবিষ্কার করতে হবে। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে মানুষ সম্ভব করে নিজস্ব সাধারণ জান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে। কারণ মানুষের সাধারণ জ্ঞান বিজ্ঞানের সাযুজ্য (association) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

 প্রকতিবাদের প্রকারভেদ (Forms of Naturalism):- দেখা যায় প্রকৃতিবাদ অধ্যাত্মজগৎ নয়, প্রাকৃতিক বস্তুজগৎকে প্রকৃত সত্য বলে মনে করে। দার্শনিক মতবাদ (philosophical doctrive) অনুযায়ী প্রকৃতিবাদের দুটি রকমফের (Forms) লক্ষ্য করা যায়।

() বস্তুজাগতিক প্রকৃতিবাদ (Materialistic Naturalism)

() জৈবিক প্রকৃতিবাদ (Biological Naturalism)

() বস্তুজাগতিক প্রকৃতিবাদ (Materialistic Naturalism):- এই দার্শনিক মতবাদ জড়বিজ্ঞানের দর্শনতত্ত্ব অনুযায়ী সামান্যকরণের (Philoso phical generalisation of Physical Sciences) ফলে সৃষ্ট। বিশ্বজগৎকে এই মতবাদ অনুযায়ী একটি বিরাট যন্ত্র (huge machine) বলে মনে করা হয়। জগতের প্রতিটি বিষয় এবং জীব এই বিরাট যন্ত্রের অংশ বিশেষ এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি প্রাণীই এই বিশ্বজগৎ তথা যান্ত্রিক প্রকৃতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ এবং কতকগুলি শারীরবৃত্তীয় রাসায়নিক নিয়মকানুন (Physio-chemical laws) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতিবাদের এই রূপ বিশ্বজগৎকে প্রাধান্য দেয় এবং মানুষকে সর্বোত্তম উপায়ে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

() জৈবিক প্রকৃতিবাদ (Biological Naturalism):- ডারউইন (Darwin)-এর বিবর্তনবাদ তত্ত্বের (Theory of evolution) অনুসরণে এর সৃষ্টি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী জৈবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় মানুষকে সর্বোচ্চ প্রাণী বলে ধরা হয়। মানুষ কখনও যন্ত্র হতে পারে না। সে অন্যান্য সকল ইতরপ্রাণীর মতো সহজাত প্রকৃতি নিয়ে জন্মায়। এই প্রকৃতিতে আদিম বাসনা কামনা প্রবৃত্তি, আকাঙক্ষার সঙ্গে সঙ্গে। সুখ গঠনমূলক প্রবৃত্তি চিন্তা চেতনা আশা আকাঙক্ষাও বর্তমান। ডারউইনের মত অনুযায়ী বিবর্তনের তত্ত্বে অস্তির টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে মানুষই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং অন্য ইতর প্রাণীরা যখন অল্পেই সন্তুষ্ট থাকে এবং অল্পেই শেষ হয়ে যায় মানুষ তখন নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী অনেকদিন সংগ্রাম করতে পারে, নিজের কল্যাণে প্রকৃতির পরিবর্তনগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং বাঁচতে পারে। তাই বলা হয় বস্তুজাগতিক প্রকৃতিবাদ যখন বহিপ্রকৃতির ওপর বেশি জোর দেয় জৈবিক প্রকৃতিবাদ তখন মানুষের স্বভাবজ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত প্রকৃতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরে।

শিক্ষায় প্রকৃতিবাদের প্রভাব :- শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় কীভাবে প্রকৃতিবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হল।

1.শিক্ষার লক্ষ্য:- বিভিন্ন প্রকৃতিবাদী দার্শনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের নির্দেশ করেন্দ্র তবে তাঁদের বক্তব্যগুলিকে বিশ্লেষণ করলে, যে মূল সূত্রটি ধরা পড়ে, তাহল এই যে-'শিক্ষার লম্ব হবে শিক্ষার্থীকে তার আত্মসংরক্ষণে (self-preservation) এবং আত্মপ্রকাশে (self-expression সহায়তা করা। প্রত্যেক শিশু বা শিক্ষার্থী তার নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী বিকাশ লাভ করবে, এটিই হর শিক্ষা সম্পর্কে প্রকৃতিবাদীদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সমাজের কোনো ছাপ বা প্রভাব তর উপর পড়া বাঞ্ছনীয় নয়। আধুনিক যুগের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্যার পার্শিনান (Nunn) বলেছেন- নিজের জীবনে পরিপূর্ণতা আনাই প্রত্যেক মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য (The proper goal of o human life is perfection of the individuals): আর সেটিই হল শিক্ষার লক্ষ্য। অর্থাৎ প্রকৃতিবাদ শিক্ষাদর্শন অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিকাশ করা। প্রকৃতিবাদীদের এই মতবাদ খুবই স্কুল এবং অনেকাংশে আংশিকও বটে। তাঁরা মানুষকে জড় প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলির সমপর্যায়ভুক্ত হিসাবে বিবেচনা করেছেন। প্রকৃতিবাদীগণ জীবনের উন্নততর মূল্যবোধ বা ভাবমূলক দিকের উপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করেননি। শিশুর নৈতিক আধ্যাত্মিক বিকাশের দিকটি এঁরা সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করেছেন। ফলে মানুষ তাঁদের কাছে ইতর পশুর সমপর্যায়ভুক্ত জীব হিসাবে গণ্য হয়েছে।


2. পাঠ্যক্রম:- প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণ শিক্ষার জন্য কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম স্থির করার পক্ষপাতী নন। প্রত্যেক শিশুরই একান্ত নিজস্ব দাবি আছে। এবং তার নিজের জন্য অভিজ্ঞতা নির্বাচনের বিষয় বা পাঠ্যক্রম (Curriculum) নির্ধারণ করার ক্ষমতা আছে, এই তাঁদের বিশ্বাস। শিশু বা শিক্ষার্থী তার নিজের প্রকৃতি চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করবে। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সে বিশ্বপ্রকৃতি (Physical nature) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এই মতবাদে বিশ্বাসী দার্শনিকগণ তাই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলির গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রথাগত শিক্ষায় প্রভৃতি পরিচয় (Nature study), কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture), উদ্যানবিদ্যা (Gardening) ইত্যাদি বিষয়সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা অর্জনে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করতে হবে। পাঠ্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকৃতিবাদী দার্শনিকদের আলোচনা থেকে একথাই স্পষ্ট হয় যে তাঁরা পাঠ্যক্রম নির্বাচনের ব্যাপারে শিশুকে অবাধ স্বাধীনতা দানের কথাই বলেছেন। বয়স্কদের দ্বারা নির্ধারিত কোনো ধরাবাঁধা পাঠ্যক্রম বা প্রথাগত কতকগুলি পাঠ্যবিষয়ের গণ্ডির মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবদ্ধ রাখলে চলবে না।

3.শিক্ষণ পদ্ধতি:- শিক্ষাপদ্ধতি (Teaching method) সম্পর্কে প্রকৃতিবাদীগণ সম্পূর্ণভাবে ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি (Negative attitude) গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, শিশুকে শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকের উৎসাহ দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই; তার শিক্ষার জন্য কোনো বিষয় কেন্দ্রিক পাঠ্যপুস্তকেরও প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের কাজ (Direct method of teaching) শিক্ষাক্ষেত্রে অবান্তর। প্রত্যেক শিশুকে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিখতে দিতে হবে। প্রকৃতিবাদী দর্শনে বিশ্বাসী শিক্ষাবিদগণ হাতেকলমে শিক্ষার (Learning by doing) উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রকৃতিবাদের মুখ্য প্রবক্তা রুশো বলেছেন "Give your pupil no verbal lesson" এছাড়া কোনো কোনো প্রকৃতিবাদী শিক্ষাবিদ শিক্ষণের ব্যাপারে শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে, ক্রীড়াচ্ছলে শিক্ষাদানের (play-way method) পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন।

4. শিক্ষকের দায়িত্ব:- শিক্ষকের কর্তব্য সম্পর্কেও প্রকৃতিবাদীগণের চিন্তার মধ্যেও অভিনবত্ব আছে। তাঁদের মতে শিক্ষকের ভূমিকা হবে পর্যবেক্ষকের (observer) তিনি তাঁর জ্ঞানের বোঝা শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেবেন না বা শুদ্ধ জ্ঞান বিতরণ করার মাধ্যমে তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন না। এমনকি শিক্ষক, তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাব দ্বারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করার চেষ্টাও করবেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের মূল কাজ হবে, শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজন মতো ন্যূনতম সহায়তা দান করে, তাদের স্বাভাবিক বিকাশের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে সহায়তা করার ব্যাপারে শিক্ষকের বিশেষধর্মী (Specific activities) কাজ হবে উপযুক্ত পরিবেশ রচনা। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে এমন এক পরিবেশ রচনা করবেন, যে পরিবেশের মধ্যে শিক্ষার্থীরা নিজের সক্রিয়তার মাধ্যমে স্বাভাবিক নিয়মে শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ প্রকৃতিবাদী দর্শন অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষাক্ষেত্রে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করবেন।

5. বিদ্যালয়:- শিক্ষালয়ের সাংগঠনিক রূপ সম্পর্কে প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণ তাঁদের অন্যান্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উদার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, শিশু প্রকৃতির (Nature) কাছ থেকেই শেখে। জড় প্রকৃতি, জৈব প্রকৃতি সবই তাকে শিক্ষা দেয়। তাই প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদার্শনিকগণ প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলিকে যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং সম্ভব হলে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে শিক্ষা পরিচালন করার কথা বলেছেন। রুশো বলেছিলেন, আদর্শ শিক্ষার জন্য শিশুকে মনুষ্য সমাজ থেকে দূরে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত তাঁর আশ্রম বিদ্যালয় সম্পর্কে বলেছিলেন- "আমার আশা ছিল যে, শান্তিনিকেতনের গাছপালা, পাখিই এদের শিক্ষার ভার নেবে।"

6. শিক্ষায় শান্তি শৃঙ্খলা:- শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা স্থাপনের ব্যাপারে, প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদার্শনিকগণ বিশেষভাবে মুক্ত শৃঙ্খলা (Free discipline) বা স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলাকে (Spontancons discipline) সমর্থন করেছেন। তাঁরা মনে করেন, অবদমন (Repression) বা শাস্তির (Punishment) মাধ্যমে যে শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়, তা শিক্ষার্থীদের মনঃপ্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; এই ধরনের শৃঙ্খলা প্রকৃত শৃঙ্খলা নয় এবং স্থায়ী শৃঙ্খলাবোধ নয়। এই প্রসঙ্গে প্রকৃতিবাদীগণ তাঁদের শিশুকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়ার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক নীতির প্রস্তাব করেছেন, যাকে বলা হয় 'কৃত কর্মের স্বাভাবিক ফলের ভিত্তিয়ে শৃঙ্খলা' (Discipline by natural consequences) এই নীতির মূল কথা হল-শিশু তার স্বাভাবিক প্রবণতার দরুন যে কর্মসম্পাদন করে, তার ফলাফলের বিচারেই সে পরবর্তীকালে তার নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এভাবে কর্মফলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দেওয়াই হবে শৃঙ্খলা স্থাপনের প্রধান উপায়। অবশ্য প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা দরকার প্রকৃতিবাদী দার্শনিকগণের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত এই নীতিটি পরবর্তীকালে সেটির অবাস্তবতার জন্য শিক্ষাবিদগণের দ্বারা বিশেষভাবে সমালোচিত হয়েছে।

উপসংহার :- এই আলোচনা থেকে সাধারণভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদর্শনে শিশু বা শিক্ষার্থীকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গতানুগতিক শিক্ষণপদ্ধতি, পাঠ্যক্রম ইত্যাদির বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। পাঠ্যক্রম, শিক্ষণপদ্ধতি, শিক্ষকের দায়িত্ব, শিক্ষালয়ের সাংগঠনিকরূণ সবই এই শিক্ষাদর্শন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, শিশুর বা শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা, আগ্রহ এবং মানসিক ক্ষমতার দ্বারা। অর্থাৎ এককথায় বলা যায়, প্রকৃতিবাদে শিক্ষার্থীর প্রকৃতি (Nature of the pupil) এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের (Physical environment) উপরই প্রাথমিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই অর্থে প্রকৃতিবাদের প্রভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুকেন্দ্রিকতা এবং মনস্তাত্ত্বিক ধারা প্রবর্তিত হয়েছে।

Front Page Download Link :- Click Here

কৃতজ্ঞতা স্বীকার Download Link  :- Click Here

সূচিপত্র- 1 Download Link  :- Click Here

সূচিপত্র- 2 Download Link  :- Click Here

গ্রন্থপঞ্জি ( bibliography) Download Link  :- Click Here

Final Assignment Sample View :-Click Here

এরকম কলেজের আপডেট পেতে whatsapp গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপের জয়েন্ট হয়ে থাকতে পারো।

Whatssap Group :- Join Now

Telegram Group :- Join Now

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ