Ticker

100/recent/ticker-posts

Translate

 শিখধর্মে গুরুকেই সমস্ত জ্ঞানের আধার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভারতে শিখ ধর্মের প্রবর্তক হলেন গুরু নানক। অর্থাৎ তিনিই হলেন এই ধর্মের প্রথম গুরু এবং এনার পরবর্তী সময়ে আরো নয় জন শিখ গুরুর আবির্ভাব ঘটেছিল। সবমিলিয়ে মোট ১০ জন শিখ গুরু ছিলেন, যাদের কাছে এই ধর্মাবলম্বীরা শিক্ষা গ্রহণ করত এবং তাঁদের দেখানো পথকে অনুসরণ করেই জীবনে মোক্ষ লাভ সম্ভব বলে, তারা মনে করত। শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ হলো- গ্রন্থ সাহেব, যেটিকেই একাদশ গুরু হিসাবে মানা হয়।


১০ জন শিখ গুরুর নাম তালিকা

➤১০জন শিখ গুরু কে কে?

প্রথম শিখগুরু: গুরু নানক

* জীবনকাল-এপ্রিল ১৫, ১৪৬৯-সেপ্টেম্বর ২২, ১৫৩৯

* গুরুপদ অর্জন করেন-আগস্ট ২০, ১৫০৭

পিতা-মেহেতা কালু ও মাতা-তৃপ্তা

তিনিই হলেন শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা

জন্ম পাঞ্জাবের তালবন্দী গ্রামে

তাঁর সমস্ত বাণী ও কথা 'গুরু গ্রন্থসাহেব'-এ বর্ণিত ও সংরক্ষিত আছে| ] গুরু নানক দেব (1469-1539): 

তালভাণ্ডিতে (বর্তমানে নানকানা সাহেব) জন্মগ্রহণ করেন, গুরু নানক ছিলেন শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা।

তাঁর শিক্ষাগুলি ঈশ্বরের একত্ব, সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের উপর জোর দিয়েছিল।

দ্বিতীয় শিখগুরু: অঙ্গদ দেব

* জীবনকাল- মার্চ ৩১, ১৫০৪-মার্চ ২৯, ১৫৫২

* গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ৭, ১৫৩৯

তিনি 'গুরুমুখি লিপি আবিষ্কার করেন

তিনি নানকের বাণী ও উপদেশসমূহ লিপিবদ্ধ করেন ] গুরু অঙ্গদ দেব  (1539-1552): 

গুরু অঙ্গদ ছিলেন দ্বিতীয় শিখ গুরু যিনি গুরুমুখী লিপিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তিনি শিখের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে শিক্ষা এবং শারীরিক সুস্থতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন।

তৃতীয় শিখগুরু: অমর দাস

* জীবনকাল-মে ৫, ১৪৭৯-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪

* গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ২৬, ১৫৫২

শিখ ধর্মকে ২২টি ভাগে ভাগ করেন

এই ভাগ গুলিকে বলা হয় 'মঞ্চিম'

লঙ্গর ব্যবস্থা চালু করেন

সতী ও পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন

গুরু অমর দাস (1552-1574): 

গুরু অমর দাস শিখ মণ্ডলীর জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সহ উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি জাতি বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমতার উপর জোর দিয়েছেন।

চতুর্থ শিখগুরু: রামদাস

* জীবনকাল-সেপ্টেম্বর ২৪, ১৫৩৪-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১

* গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৭৪

এ তার বাবা ছিলেন হরি দাস ও তার মা অনুপ দেবী (দয়া কৌর)

এ লাহোরের চুনা মান্ডিতে জন্ম গ্রহণ করেন।

এ গুরু রাম দাসের শ্বশুর ছিলেন গুরু অমর দাস, যিনি ছিলেন দশ গুরুর তৃতীয় গুরু।

এ তিনি হরি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭৭ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে সরোবর খনন করেন।

গুরু রাম দাস (1574-1581): 

গুরু রাম দাস অমৃতসর শহর প্রতিষ্ঠা এবং স্বর্ণ মন্দির নির্মাণ শুরু করার জন্য পরিচিত।

তাঁর স্তোত্রগুলি শিখ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পঞ্চম শিখগুরু: অর্জন দেব

* জীবনকাল -এপ্রিল ১৫, ১৫৬৩-মে ৩০, ১৬০৬

* গুরুপদ অর্জন করেন-সেপ্টেম্বর ১, ১৫৮১

পিতা-গুরু রামদাস ও মাতা-ভানি।

তিনি একাদশ তথা বর্তমান শিখ গুরু গুরু প্রন্থসাহেবের রচনা সংকলন করেছিলেন

তিনি অমৃতসর শহরের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করেন

এ গুরু অর্জন মসন্দ নামে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছিলেন

এ তিনি দসভন্দ প্রথাও চালু করেন

এ দরবার সাহেব স্বর্ণমন্দির নির্মান করেন

এ এই সময় থেকে গুরুপদ বংশানুক্রমিক হয়

এ বিদ্রোহী রাজপুত্র খসরুকে সাহায্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীর অর্জনদেবকে প্রাণদন্ড দেন।

 গুরু অর্জন দেব জি (1581-1606): 

গুরু অর্জন ছিলেন প্রথম শিখ গুরু যিনি গুরু গ্রন্থ সাহেব সংকলন করেছিলেন, পূর্ববর্তী গুরুদের লেখা একত্রিত করেছিলেন।

ষষ্ঠ শিখগুরু: হরগোবিন্দ

* জীবনকাল-জুন ১৯, ১৫৯৫-ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৬৪৪

* গুরুপদ অর্জন করেন-মে ২৫. ১৬০৬

এ পিতা-গুরু অর্জন দেব মাতা-গঙ্গা

এ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর দ্বারা তার বাবা গুরু অর্জনের মৃত্যুদন্ড হবার পর মারে ১১ বছর বয়সে তিনি গুরুপদ লাভ করেন

এ 'সাচ্চা বাদশাহ উপাধী গ্রহণ করেছিলেন

এ তিনি অকাত তকত গঠন করেন

 গুরু হরগোবিন্দ (1606-1644): 

গুরু হরগোবিন্দ জীবনের আধ্যাত্মিক এবং সাময়িক দিকগুলির একীকরণের উপর জোর দিয়ে মিরি-পিরির ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন।

তিনি অকাল তখত, অকাল তখতের সিংহাসনও নির্মাণ করেছিলেন।

সপ্তম শিখগুরু: হর রায়

* জীবনকাল-জানুয়ারি ১৬, ১৬৩০-অক্টোবর ৬, ১৬৬১

* গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ৩, ১৬৪৪

শাহজাহানের পুত্র দারার পক্ষ অবলম্বন করায় ঔরঙ্গজেব তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়

গুরু হর রাই (1644-1661): 

গুরু হর রাই অসুস্থদের নিরাময় করার জন্য তাঁর করুণা এবং প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত ছিলেন।

আধ্যাত্মিক নেতা হওয়া সত্ত্বেও, তিনি প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রেখেছিলেন।

অষ্টম শিখগুরু: হরকিষন

* জীবনকাল-জুলাই ৭, ১৬৫৬-মার্চ ৩০ ১৬৬৪

* গুরুপদ অর্জন করেন-অক্টোবর ৬, ১৬৬১

গুরু হর কৃষ্ণ (1661-1664): 

সর্বকনিষ্ঠ শিখ গুরু গুরু হর কৃষ্ণ অল্প বয়সেই প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলেন।

দিল্লিতে গুটিবসন্ত মহামারীর সময় তার নিঃস্বার্থ সেবার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়।

নবম শিখগুরু: তেগবাহাদুর

* জীবনকাল-এপ্রিল ১, ১৬২১-নভেম্বর ১১, ১৬৭৫

* গুরুপদ অর্জন করেন-মার্চ ২০, ১৬৬৫

■ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করায় ঔরঙ্গজেব তাকে হত্যার আদেশ দেয়

 গুরু তেগ বাহাদুর (1664-1675): 

নিপীড়নের মুখোমুখি হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য গুরু তেগ বাহাদুর তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

তাঁর শাহাদাত শিখ ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

দশম শিখগুরু :- গোবিন্দ সিংহ

* জীবনকাল-ডিসেম্বর ২২, ১৬৬৬-অক্টোবর ৭, ১৭০৮

* গুরুপদ অর্জন করেন-নভেম্বর ১১, ১৬৭৫

ও তিনি বর্তমান ভারতের বিহার রাজোর পরিনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন

এ তিনি ছিলেন শিখ জাতির নেতা, যোদ্ধা, কবি ও দার্শনিক

এ অমৃত পন্থল' পদ্ধতির প্রচলন করেন।

১১৬৯৯ সালে খালসা বাহিনী। গঠন করে শিখদের সামরিক জাতিতে পরিনত করেন

১১৭০৮ সালের ৭ অক্টোবর তিনি শিখধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবকে শিখদের পরবর্তী এবং চিরস্থায়ী গুরু ঘোষণা করেন।

 গুরু গোবিন্দ সিং (1675-1708): 

গুরু গোবিন্দ সিং, দশম এবং শেষ মানব গুরু, খালসা দীক্ষা দিয়েছিলেন এবং গুরু গ্রন্থ সাহেবকে চিরন্তন গুরু হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা, কবি এবং দার্শনিক যিনি ন্যায় ও সাম্যের জন্য লড়াই করেছিলেন |

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ