Website Link 🖇️🔗- https://joyenpurvidyasagarmission.blogspot.com/?m=1
ওজোন
গহ্বর কি ? ওজোন স্তরের অবক্ষয় কী ? ওজোন গ্যাস সম্পর্কিত পুঙ্খানপুঙ্খ তথ্য | ozone layer
ভূগোলে ওজোন গহ্বর কি একটি চর্চিত বিষয় । ওজোন স্তরের অবক্ষয় কী,
ওজোন গ্যাস কে আবিষ্কার করেন, ওজোন স্তর বিনাশের কারণ ইত্যাদি ozone layer
সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিম্নে দেওয়া হল ।
✍️ ওজোন স্তর কি :
বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে 20 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতায়
ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকায় এই অংশকে ওজোন স্তর (Ozone layer) বলে ।
➤ ওজোন গ্যাস কি :
গ্রিক শব্দ 'OZo' থেকে 'Ozone' শব্দটির উৎপত্তি ৷ যার অর্থ 'smell'
বা গন্ধ ৷ 1840 সালে সি এফ স্কোনবিন সর্বপ্রথম ওজোন গ্যাসের
অস্তিত্বের কথা বলেন এবং 1865 সালে জে এল সোরেট O3 সংকেতটি উদ্ভাবন করেন ৷
আয়তনের দিক থেকে ওজোন গ্যাস খুবই নগণ্য (0.00006 %) হলেও কার্যকারিতার দিক থেকে
যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ৷ ওজোন (O3) একটি বিষাক্ত গ্যাস হলেও
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা দেয় ৷
➧ ওজোন গ্যাসের সংকেত - O3
➧ ওজোন গ্যাস কে আবিষ্কার করেন - 1913 সালে দুজন ফরাসি
বিজ্ঞানী চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বুশন প্রথম ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন ৷
➧ ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব মাপার একক কি - ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ডবসন
এককে প্রকাশ করা হয় ৷
➧ ওজোন গ্যাসের গন্ধ কেমন - ওজোন গ্যাস আঁশটে গন্ধযুক্ত গ্যাস ৷
➧ ওজোন গ্যাসের রং কেমন - ওজোন গ্যাস হালকা নীলবর্ণের হয় ৷
✍️ ওজোন স্তরের গুরুত্ব :
ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর । পৃথিবীর জীবজগতকে
রক্ষার ক্ষেত্রে ওজোন স্তরের গুরুত্ব অপরিসীম ।
1. ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা - ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা
অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বলে, তা পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌছাতে পারেনা ৷ এর ফলে মানুষ থেকে
শুরু করে উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিনাশ প্রাপ্ত হয়না ৷
i. উদ্ভিদজগতের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে ৷ ফলে ফসল উৎপাদন
সম্ভব হয় ৷
ii. প্রাণীজগতের জীবনচক্র বিঘ্নিত হয় না ৷
iii. মানুষ চর্ম ক্যান্সার, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, চোখে ছানি পড়া,
প্রভৃতি দুরারোগ্য রোগের হাত থেকে রক্ষা পায় ৷
iv.জীববৈচিএ্য রক্ষা পায় ৷ সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য
বজায় থাকে ৷
2. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ - অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ওজোন গ্যাসের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ এর
ফলে পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে ৷
✍️ ওজোন স্তর বিনাশের কারণ :
স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তর অবস্থান করে ৷ ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ডবসন
এককে প্রকাশ করা হয় ৷ ওজোন বিনাশের ফলে যখন এই ঘনত্ব 200 ডবসন এককের নিচে
নেমে আসে তখন তা ওজন গহবর রূপে পরিচিত হয় ৷ এই গহ্বর দিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি
রশ্মি পৃথিবীতে সহজে প্রবেশ করে ৷ সাধারণত দুটি কারণে ওজোন স্তরের অবক্ষয় ঘটে৷
সেগুলি হল - i. প্রাকৃতিক কারন
ii.মনুষ্যসৃষ্টকারন ৷
i. প্রাকৃতিক
কারণ - প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণ যেমন অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব, আলোক
রাসায়নিক বিক্রিয়া, অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত, প্রভৃতির প্রভাবে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটে
৷ যেমন- O3+অতিবেগুনি রশ্মি = O2+O এবং O3+O= O2+O2 । প্রাকৃতিক কারণে যে
পরিমাণ ওজন বিনাশ ঘটে ঠিক সেই অনুপাতেই প্রাকৃতিক নিয়মে ওজন গড়ে ওঠে ।
ii. মনুষ্যসৃষ্ট
কারণ - মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপই ওজোন স্তর বিনাশের মূল কারণ ৷
যেমন-
a. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCS) - প্রধান ওজন ধ্বংসকারী গ্যাস হল ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস্ (CFCS)৷
1930 সালে মার্কিন রসায়নবিদ থমাস মিজলে (Thomas midgley) এই গ্যাস আবিষ্কার করেন
৷ এই যৌগগুলি ফ্রেয়ন নামেও পরিচিত ৷ যেমন CFC - 11 , CFC - 12 । রেফ্রিজারেটর,
এয়ার কন্ডিশনার, কম্পিউটার চিপ পরিষ্কার, ফোম ও প্লাস্টিক তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্র
থেকে CFC নির্গত হয়ে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছায় ও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ভেঙে
গিয়ে ক্লোরিন (Cl) পরমাণুতে পরিণত হয় ৷ এই ক্লোরিন পরমাণু ওজন (O3) কে ভেঙে O2 - তে পরিণত করে ৷ একটি
ক্লোরিন পরমাণু প্রায় 1 লক্ষ ওজন অনুকে ধ্বংস করতে পারে ৷
CFC+UV
রশ্মি = Cl
O3 + Cl =
ClO+O2

b. নাইট্রাস অক্সাইড - যানবাহন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন নাইট্রাস
অক্সাইড (N2O) ওজোন স্তরের অবক্ষয় করে ৷
c. নাইট্রিক অক্সাইড (NO) - স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলা জেট বিমান গুলি থেকে
নাইট্রিক অক্সাইড নির্গত হয়, যা ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে ৷
d. সালফার কনা - কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে যে সালফেট কণা থাকে তা
ওজন অনুকে ভেঙ্গে ফেলে ও ওজোন স্তরের বিনাশে সাহায্য করে ৷
e. হ্যালোন - অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি তৈরি প্রভৃতি কাজের ফলে যে হ্যালোন
যৌগের উৎপত্তি ঘটে তা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ভেঙে গিয়ে ব্রোমিন পরমাণুর সৃষ্টি
করে ৷ ওজন ধ্বংসে এই ব্রোমিনের ক্ষমতা ক্লোরিনের থেকেও বেশি ৷
এছাড়াও মিথেন, মিথাইল ক্লোরাইড, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতির
মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটছে ৷
- এগুলি হল ওজন স্তর ক্ষয়ের কারণ ৷
✍️ ওজোন স্তর বিনাশের প্রভাব :
ওজোন স্তর হল পৃথিবীর 'রক্ষাকবচ' ৷ ওজন স্তরের বিনাশ প্রাকৃতিক
পরিবেশ, মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে ৷ যেমন-
1.জলবায়ুর ওপর প্রভাব -
i. অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে আগমনের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
৷ ফলে পৃথিবীর তাপের ভারসাম্য নষ্ট হয় ৷
ii.এছাড়া ওজোন স্তরের বিনাশ বিশ্ব উষ্ণায়ন কে
ত্বরান্বিত করছে যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি
পাচ্ছে ৷
iii.অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ধোঁয়াশা ও অ্যাসিড বৃষ্টির
প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ৷
2.মানুষের ওপর প্রভাব -
চর্ম ক্যান্সার, অন্ধত্ব, চোখে ছানি পড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
হ্রাস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস প্রভৃতি ৷
3.প্রাণীর ওপর প্রভাব -
জলাশয়ে মাছ ও প্রাণীর মৃত্যু, বংশবিস্তার হ্রাস, প্ল্যাংটন ধ্বংস
হয়ে যাচ্ছে ৷
4.উদ্ভিদের ওপর প্রভাব -
উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে ও ক্লোরোফিল হ্রাস
পাচ্ছে ৷
5.বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব -
বাস্তুতান্ত্রিক চক্র বিঘ্নিত হচ্ছে ৷ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে ৷
✍️ ওজন গহ্বর কি (Ozone Hole) :
1985 সালে ডক্টর জে সি ফারমেনের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
আন্টার্টিকায় প্রথম ওজন গহ্বরের সন্ধান পান ৷
ওজোন স্তরের কোন স্থানে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 ডবসন ইউনিটের কম হলে
সেখানে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করতে পারে ৷ তখন সেই স্থানকে বলা হয় ওজন
গহবর ৷
✍️ ওজোন স্তর সুরক্ষার জন্য গৃহীত
কর্মসূচি :
1.মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal
Protocol) :
● মন্ট্রিল প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় কত সালে - 1987 সালের 16
সেপ্টেম্বর ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্নত 46 টি দেশের মধ্যে কানাডার
মন্ট্রিলে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেটি মন্ট্রিল প্রোটোকল নামে
পরিচিত ৷এই চুক্তি কার্যকর হয় 1989 সালের 1 লা জানুয়ারি থেকে ৷ এই চুক্তি
অনুসারে -
i.সমস্ত দেশকে ওজন ধ্বংসকারী পদার্থের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে ৷
ii.2050 সাল নাগাদ ওজোন স্তরকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে
হবে ৷
মন্ট্রিল প্রটোকল অনুসারে প্রতিবছর 16 সেপ্টেম্বর 'আন্তর্জাতিক ওজোন
স্তর সুরক্ষা দিবস' হিসেবে পালন করা হয় ৷ এছাড়া এজেন্ডা -21 সম্মেলনে স্থির হয়
ওজোন স্তর বিনষ্টকারী CFCS এর উৎপাদন যতটা সম্ভব কমাতে হবে ৷
✍️ বিভিন্ন অক্ষাংশে ওজোন গ্যাসের
ঘনত্ব :
নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বাড়তে
থাকে ৷ যেমন- নিরক্ষীয় অঞ্চলে 250 DU, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে 350 DU, মেরু অঞ্চলে
450 DU ৷
➧ রাষ্ট্রসংঘ 16 সেপ্টেম্বর তারিখে বিশ্ব ওজোন দিবস হিসেবে
পালন করার জন্য সারা বিশ্বে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে ।
·
·
·
·
·



0 মন্তব্যসমূহ
Thank you